থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি কার্ড) এই রোগের বাহকের নাম যুক্ত করার নির্দেশনা চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ আজ বুধবার (২৫ মে) এ নোটিশ পাঠান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), স্বাস্থ্য সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ও বাংলাদেশ ডেন্টাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এ নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক অন্য থ্যালাসেমিয়া বাহককে বিয়ে করলে তাদের সন্তান এই রোগে আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকি থাকবে। দুই জন থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে যদি বিয়ে হয়েই যায় বা স্বামী-স্ত্রী দুই জনই থ্যালাসেমিয়া বহন করে তবে সন্তান গর্ভে আসার ৮ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে কোরিওনিক ভিলাস স্যাম্পল বা এমনিওসেন্টেসিস করে বাচ্চার অবস্থা জানা সম্ভব।
এজন্য বিয়ের আগেই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রত্যেককে জানতে হবে তারা থ্যালাসেমিয়া বাহক কি না। দুজন থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করা গেলেই থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
নোটিশ প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ জানান, নোটিশের জবাব না পেলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
থ্যালাসেমিয়া কি
থ্যালাসেমিয়া মূলত একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এসব রোগী ছোট বয়স থেকেই রক্তস্বল্পতায় ভোগে। এদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা যেহেতু তাদের শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত তৈরি করতে পারে না, তাই অন্যের রক্ত ট্রান্সফিউশন নিয়ে তাদের জীবন চালাতে হয়।
থ্যালাসেমিয়া রোগে রক্তে হিমোগ্লোবিন কণা উৎপাদনে সমস্যা হয়। অর্থাৎ অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা থাকে। এটি অটোজোমাল মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত বংশগত রক্তের রোগ; মা-বাবার কাছ থেকে সন্তানের শরীরে আসে। ১৯২৫ সালে আমেরিকার টমাস কুলি ও পারোল লি এই রোগটি চিহ্নিত করেন।
থ্যালাসেমিয়া রোগটি প্রধানত দুই প্রকার। মেজর ও মাইনর। বাহকরা মাইনর থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্ম নিলে সেটি মেজর থ্যালাসেমিয়া। এর বাইরে আছে আলফা ও বিটা। আলফা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি। বিটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা অনেক বেশি।
থ্যালাসেমিয়া মেজর কুলিস অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত সন্তান সাধারণত ৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। মা ও বাবা কিংবা উভয়ের থ্যালাসেমিয়া জিন থেকে ভূমিষ্ঠ শিশুর শতকরা ২৫ ভাগ থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়, শতকরা ২৫ ভাগ সুস্থ হয়ে জন্মগ্রহণ করে, শতকরা ৫০ ভাগ রোগী বাহক হিসেবে জন্ম নেয়।
বিশেষজ্ঞ মত
এদিকে গত ৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের থ্যালাসেমিয়া সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন (অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন) করে সুস্থ করে রাখা কঠিন। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক বিপ্লব।
বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া আছে কিনা সেটা জেনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোগটিকে অনেকটাই কমিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশেও এ রোগীর সংখ্যা কমাতে হলে জাতীয় পরিচয় পত্রে (এনআইডি কার্ড) তথ্য সংযোজন কিংবা নিয়ের আগেই আক্রান্ত কিনা সেটা জেনে নেওয়া জরুরি বলেও জানান তারা।