কক্সবাজার থেকে মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী: আট হাজার ৮ শত পিচ নেশাজাতীয় ট্যাবলেট ইয়াবা পাচারের দায়ে এক রোহিঙ্গাসহ দুই আসামিকে জেল-জরিমানা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন কক্সবাজারের একটি আদালত।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন বুধবার (২৫ মে) এই রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- হাফেজ উল্লাহ (৫০) এবং মিয়ানমারের নাগরিক ওসমান গনি (৩৫)। এদের মধ্যে হাফেজ উল্লাহ টেকনাফের সেন্টমার্টিনের কোনার পাড়ার মৃত মোহাম্মদ হোছাইন ও মরিয়ম খাতুনের পুত্র। আর ওসমান গনি মিয়ানমারের আকিয়াব এর চামতলীর আনু মিয়া ও ফরিদা খাতুনের ছেলে।
রায়ে ৬ হাজার শত পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারের দায়ে হাফেজকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরো এক বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন আদালত। একই মামলায় ২ হাজার ৮০০ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারের দায়ে রোহিঙ্গা ওসমান গনিকে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ৪০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরো ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি হাফেজ উল্লাহ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হাওয়ার ১ বছর ১ মাস পর ৫০৬৯/২০২০ নম্বর ফৌজদারী মিস মামলা মূলে ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পায়। জামিন পাওয়ার পর থেকে হাফেজ উল্লাহ পলাতক রয়েছে। তবে অপর আসামি রোহিঙ্গা ওসমান গনি রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন-অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট রনজিত দাশ। তিনি জানান, ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দেওয়া এটি প্রথম রায়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর বিকেল ৪ টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার হিলটপ হোটেলের সামনে রাস্তায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম এক অভিযান চালিয়ে হাফেজ উল্লাহ ও ওসমান গনিকে আটক করে। পরে আটককৃত হাফেজ উল্লাহ’র কাছ থেকে ৬ হাজার পিচ এবং ওসমান গনি’র কাছ থেকে ২ হাজার ৮০০ পিচসহ মোট ৮ হাজার ৮ শত পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফ অস্থায়ী সার্কেলের উপ পরিদর্শক মোঃ নাছির উদ্দিন বাদী হয়ে ধৃত ইয়াবাকারবারীদ্বয়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একইদিন টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ২৮/২০১৯ ইংরেজি। জিআর মামলা নম্বর : ৮৬৮/২০১৯ ইংরেজি (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর : ৫৬০/২০২১ ইংরেজি।
মামলাটি বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিচারের জন্য মামলাটির চার্জ গঠন করেন। মামলাটিতে ৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও তাদেরকে আসামী পক্ষে জেরা করা হয়।
মামলায় আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পর্যালোচনা, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান, উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনসহ সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে রায় ঘোষণা করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১) এর ১০ (গ) ধারায় আসামি হাফেজ উল্লাহ এবং একই আইনের (খ) ধারায় আসামি ওসমান গনিকে উপরোক্ত সাজা প্রদান করেন।