রাজধানী ঢাকার যানজট ও জনসংখ্যার আধিক্যের কথা মাথায় রেখে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় গড়ে তোলা হচ্ছে ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি। বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর রাজধানী থেকে সড়কপথে এ একাডেমিতে যাওয়া যাবে মাত্র দেড় ঘণ্টায়।
উপজেলার ময়নাকাটা নদীর তীরে শেখ হাসিনা সড়কের পাশে এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩৭ একর জমি অধিগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে এ জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। আগামী বছরের মার্চে জুডিসিয়াল একাডেমি নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হতে পারে।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সংশ্নিষ্ট বিচারক, আইনজীবী ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজন। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশে একটি ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপন করা হবে। এটি করা হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাছে। এরই মধ্যে শিবচরে সুন্দর একটি জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। শিগগির জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে।
মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু হচ্ছে বলেই শিবচরে এ একাডেমি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেতু দিয়ে অত্যন্ত কম সময়ে ঢাকা থেকে একাডেমিতে পৌঁছানো যাবে। একাডেমিতে আইন ও বিচারসংশ্নিষ্ট দেশি-বিদেশে অতিথি যাঁরা আসবেন, তাঁরা সবাই পদ্মা সেতু হয়ে আসবেন। এতে তাঁদের কাছেও বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান হবে।
দেশে বর্তমানে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। দুই যুগ আগে এটি রাজধানীর কলেজ রোডে গড়ে তোলা হয়েছিল। সেখানে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বিচারকসহ সংশ্নিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ।
সম্ভাব্য জুডিসিয়াল একাডেমির রূপরেখা প্রসঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম সারওয়ার বলেন, এ জুডিসিয়াল একাডেমি হবে আন্তর্জাতিক মানের। বর্তমানে বিচারকদের প্রশিক্ষণের জন্য বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে। সেখানে স্বল্প পরিসরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু জুডিসিয়াল একাডেমি হবে আবাসিক। এখানে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
তিনি জানান, উন্নত দেশি-বিদেশি কোর্সের আওতায় বিচারকরা আবাসিক প্রশিক্ষণ পাবেন এ একাডেমিতে। এখানে নিজস্ব গবেষণা সেন্টার, স্থায়ী প্রশিক্ষক, প্রশাসন ভবন, ডরমিটরি, ডিজিটাল সেন্টার, সুইমিংপুলসহ আধুনিক সব অবকাঠামো থাকবে।
আইন সচিবের মতে, নানামুখী পদক্ষেপের পরও বিচার বিভাগে মামলাজট ক্রমেই বাড়ছে। তাই বিচারকদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করা না হলে এ সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হবে। জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপন হলে দেশি-বিদেশি বিচারকদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় আরও বাড়বে।
সূত্র জানায়, জুডিসিয়াল একাডেমি প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৬৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর আওতায় চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া অবকাঠামো নির্মাণ, একাডেমিক কারিকুলাম তৈরি এবং অন্য আনুষঙ্গিক বিষয় নির্ধারণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সমীক্ষা প্রকল্প তৈরিতে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের ছয় মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন পাওয়ার পর মূল একাডেমি, অর্থাৎ ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় নির্ণয় করে কাজ শুরু করবে আইন মন্ত্রণালয়। এর ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দ হবে এবং সে অনুযায়ী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। সে ক্ষেত্রে আগামী বছরের মার্চে এ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে পারে।
আইন মন্ত্রণালয়ের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, জুডিশিয়াল একাডেমি স্থাপনের মাধ্যমে সরকার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, অধস্তন আদালতের বিচারক, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা আধুনিক ও যুগোপযোগী উন্নততর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাড়ানো হবে।
কাজের গুণগত মানোন্নয়নে সরকারি আইন কর্মকর্তাদেরও দেওয়া হবে সময়োপযোগী বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ। থাকবে বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন একাডেমিক গবেষণা পরিচালনা, আধুনিক প্রশিক্ষণ কারিকুলাম উন্নয়ন, আইন ও বিচার-সংক্রান্ত শিক্ষা আধুনিকায়নে দেশি-বিদেশি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাডেমিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম। এতে বিশ্বের উন্নত বিচার ব্যবস্থাসম্পন্ন দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রও তৈরি করা যাবে।
সূত্র: সমকাল