নিখোঁজ ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণার প্রক্রিয়া
অ্যাডভোকেট মোঃ করমুল্লাহ্

ফৌজদারি মামলায় দ্বিতীয়বার আপিল, আইন কি বলে?

মোঃ করমুল্লাহ্ : আজকের আলোচনার বিষয় ফৌজদারি মামলায় দ্বিতীয়বার আপিল দায়ের করা যায় কিনা।

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, খালাসের ক্ষেত্রে আপিল : 

(১) উপধারা ৪ এর বিধান সাপেক্ষে সরকার যেকোন ক্ষেত্রে আপীল দায়ের করার জন্য পাবলিক প্রসিকিউটরকে নির্দেশ দিতে পারবেন।

ক) যে কোন দায়রা আদালত কর্তৃক মূল মামলায় বা আপিলে প্রদত্ত খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে;
খ) মূল মামলায় বা আপিলে যে কোন ম্যাজিষ্ট্রেট প্রদত্ত খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে।

(২) উক্তরূপ আদেশ যদি ফরিয়াদী কর্তৃক আনিত মামলায় (সি আর মামলায়) প্রদত্ত হয়ে থাকে এবং যদি আদেশটিতে আইনগত ভুল থাকে যা ন্যায় বিচার পরাভূত করে, তবে ৪১৮ ধারায় যা বলা থাকুক না কেন, ফরিয়াদী আপিল দায়ের করতে পারবে।

ক) দায়রা আদালত কর্তৃক প্রদত্ত মূল খালাস আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে;
খ) যে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত মূল খালাস আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে।

(৩) খালাস আদেশের তারিখ হতে ষাট দিন অতিক্রান্ত হবার পর ফরিয়াদী খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপিল দায়ের করলে হাইকোর্ট বিভাগে তা গ্রাহ্য হবে না।

(৪) কোন ক্ষেত্রে খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল গৃহীত না হলে, উপধারা (১) এর অধীন উক্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল চলবে না।

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭(১)ক ধারাটি বিশ্লেষণ করলে এ মর্মে উপনীত হওয়া যায় যে, সরকার নির্দেশ দিলে শুধুমাত্র পাবলিক প্রসিকিউটর মূল মামলায় এবং আপিলে খালাস প্রদান করলে উক্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়ের করতে পারবেন।

উদাহরণ-১

মূল মামলায় খালাস বলতে বুঝানো হয়েছে : কোন আসামি দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩০২ ধারা মোতাবেক বিচার্য মামলায় দায়রা আদালত হতে খালাস পেয়েছেন। উক্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউটর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১৭(১)(ক) ধারা মোতাবেক শুধুমাত্র হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করতে পারবেন।

উদাহরণ-২

আপিলে খালাস বলতে বুঝানো হয়েছে : কোন আসামি দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩২৪ ধারা মোতাবেক বিচার্য মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত হতে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। উক্ত আসামী উক্ত কারাদণ্ড বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৮ ধারা মোতাবেক দায়রা আদালতে আপিল করেছেন এবং খালাস পেয়েছেন। দায়রা আদালত আপিল এখতিয়ার মূলে যে খালাস আদেশ প্রদান করেছেন উক্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউটর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১৭(১)(ক) ধারা মোতাবেক শুধুমাত্র হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করতে পারবেন।

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭(১)খ ধারাটি বিশ্লেষণ করলে এ মর্মে উপনীত হওয়া যায় যে, সরকার নির্দেশ দিলে শুধুমাত্র পাবলিক প্রসিকিউটর মূল মামলায় এবং আপিলে খালাস প্রদান করলে উক্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র দায়রা আদালতে আপিল দায়ের করতে পারবেন।

উদাহরণ-১

মূল মামলায় খালাস বলতে বুঝানো হয়েছে : কোন আসামি দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩২৪ ধারা মোতাবেক বিচার্য মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত হতে খালাস পেয়েছেন। উক্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউটর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১৭(১)(খ) ধারা মোতাবেক শুধুমাত্র দায়রা আদালতে আপিল করতে পারবেন।

উদাহরণ-২

আপিলে খালাস বলতে বুঝানো হয়েছে : কোন আসামি দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩২৩ ধারা মোতাবেক বিচার্য মামলায় ৩য় অথবা ২য় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত হতে ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। উক্ত আসামী উক্ত কারাদণ্ড বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৭ ধারা মোতাবেক চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আপিল করেছেন এবং খালাস পেয়েছেন।

চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আপিল এখতিয়ার মূলে যে খালাস আদেশ প্রদান করেছেন উক্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউটর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১৭(১)(খ) ধারা মোতাবেক শুধুমাত্র দায়রা আদালতে আপিল করতে পারবেন।

পাবলিক প্রসিকিউটর খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করার তামাদি

তামাদি আইন ১৯০৮ এর প্রথম তফসিলের ১৫৭ অনুচ্ছেদ মোতাবেক ৬ মাসের মধ্যে আপিল দায়ের করতে হবে। যদিও এক্ষেত্রে তামাদি আইনের ৫ ধারা প্রযোজ্য হবে।

পাবলিক প্রসিকিউটর খালাস-আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের না করলে সংবাদদাতা কর্তৃক করণীয় কি?

এক্ষেত্রে সংবাদদাতা আপিল দায়ের করতে পারবেন না কিন্তু রিভিশন দায়ের করতে পারবেন। রেফারেন্স- [36 DLR AD (1984)4]

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭(২)ক ধারাটি বিশ্লেষণ করলে এ মর্মে উপনীত হওয়া যায় যে, দায়রা আদালত কর্তৃক সি আর মূল মামলায় খালাস প্রদান করলে উক্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ মামলার বাদী শুধুমাত্র হাইকোর্ট বিভাগে খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করতে পারবেন।

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭(২)খ ধারাটি বিশ্লেষণ করলে এ মর্মে উপনীত হওয়া যায় যে, যেকোন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কর্তৃক সি আর মূল মামলায় খালাস প্রদান করলে উক্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ মামলার বাদী শুধুমাত্র দায়রা আদালতে খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করতে পারবেন।

সি আর মামলায় খালাসের বিরুদ্ধে ফরিয়াদি কর্তৃক আপিল দায়ের করার তামাদির মেয়াদ

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭(৩) ধারা মোতাবেক ৬০ দিনের মধ্যে খালাসের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করতে হবে। এক্ষেত্রে তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২৯(২) ধারার বিধান মোতাবেক ৫ ধারায় বিলম্ব মওকুফের আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।

ফৌজদারি কার্যবির ৪১৭(৪) ধারাটি বিশ্লেষণ করলে এই মর্মে উপনীত হওয়া যায় যে, পাবলিক প্রসিকিউটর খালাসের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আপিল দায়ের করতে পারেন না।

উদাহরণস্বরূপ, কোন আসামি দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩২৩ ধারা মোতাবেক বিচার্য মামলায় ২য় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত হতে ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। উক্ত আসামী উক্ত কারাদণ্ড বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৭ ধারা মোতাবেক চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আপিল করেছেন এবং খালাস পেয়েছেন।

চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আপিল এখতিয়ার মূলে যে খালাস আদেশ প্রদান করেছেন উক্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউটর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১৭(১)(খ) ধারা মোতাবেক দায়রা আদালতে একবার আপিল দায়ের করতে পারবেন। দায়রা আদালত উক্ত খালাস আদেশ বহাল রাখলে পাবলিক প্রসিকিউটর পুনরায় ৪১৭(১)ক ধারা মোতাবেক ২য় বার হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়ের করতে পারবেন না।

অর্থাৎ খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করার পর উক্ত আপিল না মঞ্জুর হলে, পুনরায় আপিল দায়ের করার কোন সুযোগ ফৌজদারী কার্যবিধিতে নাই।

পরিশেষে এই সিদ্ধান্ত উপনীত হতে পারি যে, ফৌজদারী কার্যবিধিতে দ্বিতীয়বার আপিল করা গেলেও খালাসের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউটর দ্বিতীয়বার আপিল দায়ের করতে পারেন না।

লেখক : আইনজীবী, চট্টগ্রাম জজ আদালত।