আমেনা হুদা: আমি একজন নারী এ্যাডভোকেট। কিছুদিন আগে গাজীপুর জেলা জজকোর্টে একটি মামলার শুনানীতে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এতে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নারী আইনজীবী যারা আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত কোর্টে আসেন না। এতে করে অনেকেই মনে করেন হয়তোবা ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে তাঁরা কোর্টমুখী হন না। ব্যাপারটা আসলে তেমন নয়। আমার কাছে মনে হয় এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে কোর্টরুমের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। আজ আমি সে বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য এই লেখার অবতারণা করছি।
আমি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে আইন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ওই সময়কালে আমি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, নারীর অধিকার ও সুরক্ষা, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, লিঙ্গ বৈষম্য, যৌতুক নিরোধ নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল।
চাকুরীসূত্রে আমাকে গোপালগঞ্জ জেলা জজ কোর্ট ও বগুড়া জেলা জজ কোর্টে কাজ করতে হয়েছে। যার ফলে আমার মনে হয়েছে আমরা নারী এ্যাডভোকেটগণ নারীর অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে কাজ করি কিন্তু আমরা নিজেরা কতটা সুরক্ষা পাচ্ছি? আমরা কি আমাদের কর্মপরিবেশ নারীবান্ধব করতে পেরেছি। সে জন্য আমার কাছে মনে হয় কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া দরকার।
এক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত কিছু পরামর্শ তুলে ধরছি। যেমন-
১. যে কোর্টে মামলার জট বেশি ওই কোর্টরুম এ্যাডভোকেটদের সংখ্যার অনুপাতে যথেষ্ট বড় হওয়া প্রয়োজন যাতে নারী এ্যাডভোকেটরা যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে তাদের শুনানীতে অংশগ্রহণ করতে পারেন;
২. দৈনিক মামলার কজলিস্ট অনুযায়ী প্রথম ১৫-২০টি মামলার সাথে সম্পৃক্ত এ্যাডভোকেটগন কোটরুমে প্রবেশ করবেন এবং শুনানী শেষে এই সকল এ্যাডভোকেটগণ কোর্টরুম ত্যাগ করবেন এবং পরবর্তী কজলিস্ট অনুযায়ী ১৫-২০টি মামলার সাথে সম্পৃক্ত এ্যাডভোকেটগন কোটরুমে প্রবেশ করবেন। এইভাবে প্রক্রিয়াটি প্রাত্যহিকভাবে চলতে পারে;
৩. সিনিয়র এ্যাডভোকেট ও জুনিয়র এ্যাডভোকেটগণের মধ্যে পারস্পরিক সন্মান ও সৌহাদ্যপূর্ণ আচারণ বজায় রাখা প্রয়োজন;
৪. কোর্টরুমে অহেতুক ভীড় এড়ানো, যাতে করে মামলার শুনানীতে বিঘ্ন না ঘটে;
৫. কোর্ট রুমে অহেতুক হট্টগোল না করা এতে করে বিচারকদের মামলার আর্জি শোনা ও বিচারকাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বিঘ্ন ঘটতে পারে।
অতএব নারী এ্যাডভোকেটদের জন্য কোর্টে নিয়মিত অনুশীলন নিশ্চিত করার জন্য নারীবান্ধব নিরাপদ ও সুরক্ষিত কোর্টপ্রাঙ্গণ নিশ্চিত করা এখন একটি সময়ের দাবী। এইক্ষেত্রে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে যাতে করে নারী এ্যাডভোকেটগণ তাদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা ও সন্মানের সাথে কাজ করতে পারেন।
লেখক: আইনজীবী ও সাবেক আইন কর্মকর্তা, ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি); শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।