মোঃ জিয়াউর রহমান : পৃথিবীতে মাত্র ১৩টি দেশে এখনও বাঘ বন্য পরিবেশে টিকে আছে। ২০১০ সনে সেই ১৩টি দেশের রাষ্ট্রনায়করা রাশিয়াতে একত্রিত হয়েছিলেন, তারা ২০২২ সনের মধ্যে নিজ নিজ দেশের বন্য বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার অঙ্গীকার করেছিলেন। সেই টার্গেট পূরণ হলো কিনা তা পর্যালোচনার জন্য আগামী বছর ২০২২ সনে আবার টাইগার সামিট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ টাইগার সামিট এর অন্যতম সদস্য রাষ্ট্র।
টাইগার সামিট এর অঙ্গীকার পূরণে বাংলাদেশ কি সক্ষম হয়েছে? ২০১৫ সনে বিজ্ঞান ভিত্তিক সমীক্ষায় সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১০৬টা। ২০১৮ সনে সমীক্ষায় বাঘ পাওয়া গিয়েছে ১১৪ টা! তিন বছরে মাত্র ৮ টি বাঘ বৃদ্ধি, সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার মত আশাবাদী কিছু নয়। তবুও আশাবাদী হওয়ার খানিকটা জায়গা হলো বাঘের সংখ্যাটা কমেনি, স্থিতিশীল বলা যায়। এর মধ্যে সুন্দরবনের ত্রাস নানান দস্যুবাহিনী বিলুপ্ত হয়েছে বা আত্মসমর্পণ করেছে যা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নে নিশ্চয়ই ভূমিকা রাখছে। বাওয়ালি, মৌয়াল, ফরেস্ট গার্ড সহ সুন্দরবন ভিত্তিক পেশাজীবীরা অবশ্য বলছে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২২ এর সামিটকে কেন্দ্র করে এবছর শীতে আবার সমীক্ষা হবে, তখনই প্রকৃত তথ্য জানা যাবে।
অবশ্য মন খারাপ করার মত অনেক ঘটনাই ঘটছে। বিভিন্ন সময় বনে মৃত বাঘ পাওয়া গিয়েছে, বাঘের চামড়া উদ্ধার হয়েছে। সবশেষ আমাদের বিমানবন্দরে বাঘের হাড় সহ চীনা নাগরিক আটক হয়েছে। এসব স্পষ্ট করে যে, বাঘ শিকার বন্ধ হয়নি, রীতিমত চলছে।
বিশ্বখ্যাত শিকারি জিম করবেট সারাজীবনে ৩৩টি বাঘ শিকার করেছিলেন। আমাদের একজন পচাব্দি গাজী ছিলেন, তিনি শিকার করেছিলেন ৫৭টি বেঙ্গল টাইগার। এসব ছাপিয়ে সম্প্রতি একজন বাঘ শিকারি আটক হয়েছেন যার নাম ‘টাইগার হাবিব’। তার দাবী অনুযায়ী সুন্দরবনে তিনি একাই শিকার করেছেন ৭০টি বাঘ! চিন্তা করা যায়! তর্কের খাতিরে যদি ধরি ৭০ নয়, তার আধেক, তাহলে ৩৫টি! বলা যায়, এই হাবিব একাই টাইগার সামিট এ বাংলাদেশের অঙ্গীকার ব্যর্থ করে দিয়েছে।
হাবিব এর বিরুদ্ধে বাঘ হত্যা সহ শিকারের জন্য ৮টি মামলা আছে। অবশ্য “বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান) আইন ২০১২” এর ৩৬ ধারা মতে, বাঘ হত্যার শাস্তি ২ হতে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও সাথে ১-১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড। আর একাধিকবার একই অপরাধ করলে তা ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড হতে পারে। এখন পর্যন্ত বাঘ হত্যার জন্য কারও শাস্তি হয়েছে তা অবশ্য নজরে আসেনি। হাবিব এর তথ্য মতে, সুন্দরবনে ২০/২৫ টি শিকার চক্র আ্যকটিভ আছে। টাইগার হাবিব সহ তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক। শুধু আটক করে জেলহাজতে দিলেই হবে না, মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থিত করে তার যোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে টাইগার হাবিব বের হয়ে আবার বাঘ হত্যায় নামবে।
আমাদের কে বাঘ রক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে, শিকার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে, বন্য পরিবেশ-প্রতিবেশ অটুট রাখতে হবে। বাঘ সুন্দরবনের কিউরেটর। তাই বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে, আর সুন্দরবন বাঁচলে তার উপর নির্ভরশীল লক্ষ লক্ষ মানুষ বাঁচবে। গতকাল (২৯ জুলাই) ছিল বিশ্ব বাঘ দিবস। বাঘ দিবসে নাগরিক হিসেবে আমরা সবাই সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান সুন্দরবন কামনা করতে পারি।
লেখক : বিচারক, সাইবার ট্রাইব্যুনাল, রাজশাহী।