মোঃ শহীদুল্লাহ মানসুর : বিয়ে একধরণের আনুষ্ঠানিকতা যা পরিবার নামক সামাজিক প্রতিষ্ঠান গঠন করে।বিয়ে ছাড়া কোন পরিবারের বৈধতা যেমন নেই তেমনি এর আইনগত ভিত্তিও নেই।প্রতিটি মানুষ জীবনে সঙ্গী পেতে চায় কারণ সামাজিক ও স্বভাবত একা থাকা সম্ভব হয়না। মূলত এই আকাঙ্ক্ষা হতেই বিয়ে প্রথার প্রচলন হয়েছে।
বিয়ে পারিবারিক ব্যবস্থাকে বৈধতা দেয়। বিয়ে হল একটি সামাজিক বন্ধন বা চুক্তি, যার মাধ্যমে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক সূত্রপাত করে। এটি একটি বৈশ্বিক ও সার্বজনীন প্রথা যা ভিন্ন দেশ, জাতি বা সংস্কৃতি মেনে কিছু নিয়ম ও রীতিনীতি নির্ধারণ করে এবং সেই বিধিবিধান মেনে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করে।
সাধারণত একটি বৈবাহিক সম্পর্ক ঐ দম্পতির মধ্যে থাকা যাবতীয় কার্যক্রম, দায়-দায়িত্বকে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দেয় এবং বৈধভাবে স্বেচ্ছায় সন্তান জন্মদানের নিশ্চয়তা দেয়। বর্তমান বিশ্বের প্রায় সবদেশেই বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ এবং জোরপূর্বক বিয়েসহ নারী ও শিশুর অধিকার সংরক্ষণের জন্য শাস্তির বিধান রেখে আইন করা হচ্ছে।আইনি বিধিবিধান অমান্যে শাস্তি যেমন হচ্ছে তেমনি অপরাধগুলোর সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবগত করতে বিভিন্ন সভা সেমিনার করা হচ্ছে।
বিবাহ
বিয়ে একটি বিশেষ ধরণের সম্পর্ক যা একটি নতুন পারিবারিক সম্পর্ক গঠন করে। এখানে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার মধ্যে একটি মোটামুটি স্থায়ী সম্পর্ক স্থাপন হয় যা শুধুমাত্র সন্তানের জন্ম পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয় বরং এখানে অনেক ধরণের পারস্পরিক দায়-দায়িত্ব রয়েছে। সমাজ বিজ্ঞানী E.R. Groves এর মতে, “বিয়ে একটি দুঃসাহসিক কাজ। যার একটি আইনি ভিত্তি এবং সামাজিক গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন রয়েছে”
বিয়ের শর্ত
বিয়ের যোগ্যতা যাচাই করার মতো কোন সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। তবে মুসলিম শরিয়া আইন ও দেশীয় আইন পর্যালোচনা করলে বিশেষ কিছু কাজ ও পরিস্থিতিকে যোগ্যতা বলে বিবেচনা করা যেতে পারে কিন্তু এগুলোই যোগ্যতা নির্ধারণের মাপকাঠি তা বলাবাহুল্য। নিচে আলোচনা করা যাক,
মুসলিম
মুসলিম আইনে বিয়ে সম্পন্ন হতে হলে বিয়ের উভয়পক্ষকে মুসলিম হতে হবে তবে এক্ষেত্রে শরিয়াহ আইনে মুসলিম ছেলেরা চাইলে কিতাবি অর্থাৎ ইহুদী বা খ্রীস্টান মেয়েকে বিয়ে করতে পারে কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য নয়।
সুস্থ ও স্বাভাবিক মস্তিষ্কের অধিকারী
বিয়ের সময় অবশ্যই উভয়পক্ষকে সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে হবে। কেননা বিয়ে একধরনের চুক্তি। চুক্তি সম্পন্ন করতে হলে পক্ষদের মতামত অত্যন্ত জরুরী আর সুস্থ ও স্বাভাবিক মস্তিষ্কের অধিকারী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ মুক্তভাবে মতামত দিতে পারেনা।তবে এক্ষেত্রে সাময়িক পাগল কিংবা মৌসুমী পাগল হলে সে তার সুস্থতার সময়ে বিয়ে করতে পারবে তবে তা অপর পক্ষকে জানবে যে ছেলে/মেয়ের অস্থায়ী মানসিক সমস্যা আছে নইলে তা প্রতারণার শামিল বলে বিবেচিত হবে।
প্রাপ্তবয়স্ক
সমগ্র বিশ্বেই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া বা না হওয়া নিয়ে বিতর্ক বিদ্যমান। মুসলিম শরিয়াহ আইনে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কোন সময় নির্ধারণ করেনি বরং দৈহিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনার দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুযায়ী একজন ছেলের ২১ বছর ও মেয়ের ১৮ বছর বয়সকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার মানদণ্ড বিবেচনা করা হয়েছে কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই বিয়ে হলে তা অবৈধ এমন কোন বিধান এখানে নেই অর্থাৎ বিয়ে যে বয়সেই হোক তা বৈধ কিন্তু বাল্যবিয়ে হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।বাল্যবিবাহের সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রতিটি মানুষ শাস্তির সম্মুখীন হবেন।
আইনে বলা হয়েছে যে, যদি কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করেন তবে এর জন্য অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক একলক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হতে পারে এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে অনধিক ৩ তিন মাস কারাদণ্ড হবে।এছাড়াও আরো বলা হয়েছে কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বিয়ে করলে তার অনধিক একমাসের আটকাদেশ (কারাদন্ড নয়) বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় ধরনের শাস্তিযোগ্য হবে।
এক্ষেত্রে পিতা-মাতা বা আইনগত অভিভাবক যদি আইনগতভাবে বা আইন বহির্ভূতভাবে কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করান বা প্ররোচনা বা বাধ্য বা নির্দেশ প্রদান করেন তবে এর জন্য উক্ত ব্যক্তির অনধিক দুই বছরের ও অন্যূন ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হতে পারে এবং উক্ত অর্থদণ্ড অনাদায়ে অনধিক তিন মাস কারাদণ্ড হতে পারে।
মনে রাখতে হবে যদি কোনো ব্যক্তি বাল্যবিয়ে পরিচালনা বা সম্পন্ন করেন তিনিও শাস্তির সম্মুখীন হবেন।এছাড়াও কাজী বা কোনো বিবাহ নিবন্ধক যদি বাল্যবিবাহ নিবন্ধন করেন তবে এর জন্য তার অনধিক দুই বছর ও অন্যূন ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হতে পারে এবং উক্ত অর্থদণ্ড অনাদায়ে অনধিক তিন মাস কারাদণ্ড হবে এবং তার লাইসেন্স বা নিয়োগ বাতিল করা হবে।
বিয়ের উপাদান
বিয়ের উপাদানকে সাধারণভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।মুসলিম শরিয়া আইনে এক পক্ষের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে অন্যপক্ষ সম্মতি প্রদান করলে এবং সেই সম্মতি দুইজন পুরুষ বা এক পুরুষ- দুই মহিলার সম্মুখে হলে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে মর্মে বিবেচিত হবে।
বিয়ের জন্য অনুমতি
বিয়ের অনুমতি কে দিবেন তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা সম্ভব। কেননা বিয়ের অনুমতি সাধারণত বিয়ের পক্ষগণ (বর-কনে) স্বেচ্ছায়, কোনরূপ ভয়ভীতি ছাড়া অনুমতি দিবেন মর্মে আইনি বিধান রয়েছে। কিন্তু পক্ষগণ যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয় তবে কে অনুমতি দিবেন? এক্ষেত্রে সাধরণত পক্ষগণের বৈধ অভিভাবক অনুমতি প্রদান করতে পারে।বিয়েতে যেই অনুমতি দিক না কেন বিয়ে বৈধ থাকবে তবে মেয়ে চাইলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বিয়ে রাখবে কিনা সেটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, বাল্যবিবাহ বাংলাদেশী আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিন্তু বিয়ে শরিয়া মোতাবেক হলে তা সবসময়েই বৈধ থাকে।
বিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও গুরুত্ব
বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর আইন অনুসারে বিয়ে রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক তবে রেজিস্ট্রেশন করা বা না করা বিয়ের বৈধতা নির্ধারণ করেনা বরং মুসলিম শরিয়া বিধিবিধান মেনে বিয়ে সম্পন্ন হলেই বিয়ে বৈধ। মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী, কাজীর উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হলে বিবাহের সাথে সাথেই কাজী বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলবেন কিন্তু কাজী উপস্থিত না থাকলে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বর নিকটস্থ কাজী অফিসে বিয়ে সম্পর্কে অবগত করে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিবেন।যদি তা করতে ব্যর্থ হন তবে বরের সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল অথবা তিন হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড হতে পারে। এক্ষেত্রে বিয়ে রেজিস্ট্রি মেয়ের কোন দায়-দায়িত্ব থাকেনা।
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বে বিয়ের ফলাফল
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বেই বিয়ে সম্পন্ন হলে তাকে আইনের ভাষায় বাল্যবিবাহ বলা হয় তবে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলে তা বৈধ বিয়ে বলে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশী আইনে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বে বিয়ে হলে যে বিধান রাখা হয়েছে তাতে বেশকিছু অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যায় যা বাল্যবিবাহ বন্ধে ও বিচারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। The Dissolution of Muslim Marriage Act,1939 অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বেই বিয়ে সম্পন্ন হলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর মেয়ে চাইলে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে সেক্ষেত্রে কিছু বিধান বিবেচনা করতে হবে।
ভিন্ন ধর্মের ব্যক্তির সাথে বিয়ে
মুসলিম আইন অনুযায়ী একজন মুসলিম ছেলে কোনো কিতাবি অর্থাৎ ইহুদী ও খ্রীস্টান মেয়েকে বিয়ে করতে পারে। তবে কোন মুসলিম মেয়ে অন্য কোন ধর্মের ছেলেকে বিয়ে করতে পারেনা। সুতরাং এই দুটি বিকল্প বিধান ছাড়া অন্যকোন ধর্মের ছেলে বা মেয়েকে মুসলিম শরিয়াহ আইন অনুযায়ী বিয়ে করা সম্ভব নয়।তবে বাংলাদেশে বিশেষ বিবাহ আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী যেকোনো ব্যক্তি যেকোন ধর্মের ব্যক্তিকে বিয়ে করতে পারে। এক্ষেত্রে ঐ আইনের যাবতীয় বিধান মেনে বিয়ে করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটি করলে তা মুসলিম শরিয়া আইনের অধীনে বিয়ে হয়েছে মর্মে বিবেচিত হবে না বা দাবিও করার সুযোগ নেই।
ইদ্দত পিরিয়ড
সাধারণত কোনো বিয়ে দুটি কারণে ভেঙ্গে যেতে পারে, যথা তালাক ও স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যু হলে। এছাড়া স্বামী বা স্ত্রী যদি হারিয়ে যায় এবং তাকে ৭ বছরের অধিক সময় ধরে পাওয়া না যায় তবেও বিয়ে ভেঙ্গে যায়। বিয়ে ভেঙ্গে গেলে স্ত্রীকে ইদ্দত পিরিয়ড অতিবাহিত করতে হয় নতুন বিয়ে করতে। এক্ষেত্রেও দুটি বিধান রয়েছে যথা, যদি তালাকপ্রাপ্ত হন তবে স্ত্রীকে তিন মাস দশদিন এবং স্বামীর মৃত্যু বা হারিয়ে গেলে চার মাস দশদিন ইদ্দত পিরিয়ড পার করতে হয়।
বৈধ বিয়ের অধিকার ও দায়িত্ব
বিয়ের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি হয়। বিয়ের মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে একে অপরের প্রতি অনেক ধরনের অধিকার ও দায়িত্ব আরোপিত হয়। এই অধিকার ও দায়িত্বকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
উভয়ের অধিকার
যেকোন সম্পর্ক টিকে থাকে বিশ্বাসের উপর। বিশ্বস্ত তাছাড়া যেকোনো সম্পর্ক ভেঙ্গে পড়ে ক্ষণিকের মধ্যেই।বিশ্বস্ততা উভয়ের প্রতি সমান থাকা জরুরি। এটি এককভাবে কারো উপর নির্ভর করেনা। বিয়ের মাধ্যমে দম্পতিদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ককে বৈধতা দেয়। এটি স্বামী ও স্ত্রীর একে অপরের উপরের প্রতি সমঅধিকার। এই বৈধ সম্পর্কের মধ্যদিয়ে যে সন্তান জন্মদান করে সেই সন্তানের প্রতি অধিকার ও দায়িত্ব উভয়পক্ষের থাকে। এছাড়াও উত্তরাধিকার সত্ত্বেও সম্পত্তি পাওয়ার যে অধিকার তা স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের থাকে। এটি কারো একক অধিকার নয়।
স্বামীর অধিকার
স্বামীর প্রতি প্রতিটি স্ত্রী আনুগত্য প্রকাশ করবে। অর্থাৎ প্রতিটি স্ত্রী তার স্বামীকে মেনে চলবে। তবে এই মেনে চলা মানে স্বামীর অবৈধ দাবী বা চাওয়া পাওয়া মেনে চলতে হবে এমনটি নয়। এছাড়াও স্বামী স্ত্রীর চলাচলে কিছু বিধিনিষেধ দিতে পারে তবে এটি একটি বিতর্কিত বিধান তবে সাংসারিক জীবনে শান্তি ও সংসারের বৃহৎ স্বার্থে স্ত্রী স্বামীর সব ধরণের চাওয়াকে মেনে নিতে পারে। স্বামীর সাথে থাকা স্বামীর অন্যতম অধিকার যা স্ত্রীরও সমঅধিকার। স্বামীকে উপযুক্ত ও যথাযথভাবে সঙ্গ দেওয়া ও স্ত্রীর যেমন দায়িত্ব তেমন তার অধিকারও বটে। গৃহস্থালির কাজ ও সন্তানের লালনপালন করতে স্ত্রী বাধ্য নয়। তবে সাংসারিক দায়িত্ববোধ ও সন্তানের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় স্ত্রী স্বামীর কথা মেনে চলতেই পারে।
স্ত্রীর অধিকার
প্রতিটি স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহর পাবে এবং সেই অনুমোদনের উপর স্ত্রীর একচ্ছত্র অধিকার থাকবে।এছাড়াও স্বামীর কাছ হতে খোরপোষের অধিকারও স্ত্রীর। একজন মেয়ে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখবে, চলবে, ঘুরবে এগুলো সবই তার অধিকার। এখান হতে কেউ দূরে রাখতে পারবেনা।
কোর্ট ম্যারিজের কোন আইনগত ভিত্তি আছে কি?
শুধুমাত্র এফিডেভিট করে বিয়ে করলে বন্ধন শক্ত ও নিরাপদ হয় এমন ধারণার আইনগত ভিত্তি নেই। কাজী অফিসে বিয়ে করলে মোটা অঙ্কের ফিস দিতে হয় তাই কোর্ট ম্যারেজকে অধিকতর সহজ ও ভাল মনে করেন অনেকেই। কোর্ট ম্যারিজের প্রধান দুর্বলতা হলো, কাবিন রেজিষ্ট্রী করা না হলে স্ত্রী তাঁর মোহরানা আদায় করতে ব্যর্থ হবেন। এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে তা প্রমাণ করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কোর্ট ম্যারিজে একপক্ষ দ্বারা অন্যপক্ষ প্রতারিত হবার সম্ভাবানা অনেক বেশি থাকে।
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ‘কোর্ট ম্যারেজের’ কোন বৈধতা দেওয়া হয়নি, এমনকি এর কোন আনুষ্ঠানিক অস্তিত্বও নেই। তবে বর্তমানে আদালত কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমলে নিলেও তা বিয়ের বৈধতা দেয়না এখানে বিস্তর জটিলতা থেকেই যায়। তাই এটিকে এড়িয়ে চলা উত্তম তবে কাবিন রেজিস্ট্রির পর এফিডেভিট করা যেতে পারে।
মন্তব্য
মুসলিম বিবাহ আইন ও শরিয়া আইনের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই তবে আইন দুটির মধ্যে অনেক ধরনের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক বিয়ের বয়স সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে। মেয়ের বিয়ের বয়স ১৮ বছর বিবেচনা করা হলেও দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারা মোতাবেক ১৪ বছরের পূর্বে বিয়ের পরেও শারীরিক সম্পর্ক হলে তা ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে কিন্তু ১৪ বছরের পর বিয়ে হলে কি হবে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বিধান দেওয়া হয়নি। এছাড়াও বিয়ের সময় কোন শর্ত দেওয়া যাবে কিনা? দিতে পারলে কেমন শর্ত দেওয়া যাবে তা নিয়ে স্পষ্ট বিধান দেওয়া নেই।
তবে কাবিননামায় কয়েকটি বিধানযুক্ত করার চেষ্টা করা হলেও তা স্পষ্ট করা হয়নি সুতরাং এই বিধানগুলো যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছেনা। প্রকৃতপক্ষে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের অধিকারগুলো অনেকাংশে চাপা পড়ে গেছে। এই অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠার জন্যে শুধু আইনি বিধান দিয়ে সম্ভব নয় বরং ধর্মীয় বিধানগুলোর যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। শরিয়া ও আইনের সমন্বয় ঘটাতে হবে তবেই বিয়ে ও বিয়েসংক্রান্ত অন্যান্য দায়-দায়িত্বগুলোকে আরো বেশি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এই ব্যাপারে আমরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মুসলিম শরিয়া আইনগুলোকে আলোকপাত করতে পারি যেখানে মুসলিম শরিয়া আইনগুলোকে তুলনামূলক ইসলামের স্পিরিট থেকে বিবেচনা করে আধুনিকভাবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেছে। বিয়েকে শুধুমাত্র চুক্তি নয় বরং এটিকে ভালবাসা ও দায়দায়িত্বের সম্পর্ক হিসাবে বিবেচনা করেছে।
লেখক : শিক্ষানবিশ আইনজীবী, জজকোর্ট, ঢাকা