মানিকগঞ্জে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সহযোগীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করায় আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলামকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আইনজীবীর বিষয়ে নালিশ করে বার সমিতিকে মানিকগঞ্জের জেলা জজের চিঠি কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
পাশাপাশি রুলে মানিকগঞ্জের আদালতে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব ও ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম।
এর আগে সোমবার (২৪ অক্টোবর) মানিকগঞ্জে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ও সহযোগীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করায় আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলামকে বহিষ্কারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
রিটে মানিকগঞ্জের আদালতে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয় তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই আইনজীবীর বিষয়ে বার সমিতিকে মানিকগঞ্জের জেলা জজের চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম আশরাফ এ রিট দায়ের করেন। রিটে আইন সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, দুদক চেয়ারম্যান, বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
গত ১৯ অক্টোবর মানিকগঞ্জে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ও সহযোগীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করায় মাহাবুবুল ইসলাম নামে মানিকগঞ্জ বারের এক আইনজীবীকে ১৫ দিনের জন্য আইন পেশা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
বিকেলে নোটিশ পাওয়ার পর পরই বিকেলে আদালত চত্বরের সামনে শহীদ রফিক সড়কে আইনজীবী মাহাবুবুর ইসলাম গলায় ‘ঘুষের চেয়ে ভিক্ষা উত্তম, করলাম প্রতিবাদ, হইলাম বহিষ্কার’ লেখাসম্বলিত গলায় প্লেকার্ড ঝুলিয়ে এর প্রতিবাদ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর জেলার আদালত প্রাঙ্গণে মাহাবুবুল ইসলামের নেতৃত্বে মানিকগঞ্জ বারের কয়েকজন আইনজীবী বিচার বিভাগে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি আর ন্যায়বিচার এক সঙ্গে চলে না, স্লোগান সম্বলিত লিফলেট রিতরণ ও সহযোগিদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচিতে তারা দাবি করেন, অ্যাফিডেভিট করতে নির্দিষ্ট ফি থেকে অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
এক হাজার টাকার কমে কোনো নকল সরবরাহ করা হচ্ছে না। রেকর্ড রুম থেকে নথি পেতে হলে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। জেলার বিচার বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিচার প্রার্থীদের মামলা খরচ অনেক বেড়ে যায়। এই কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মাহাবুবুল রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন সমিতির সভাপতি জামিলুর রশিদ খান ও সাধারণ সম্পাদক নূরতাজ আলম ওরফে বাহার। লিখিত এই নোটিশ ১৫ কার্যদিবসের জন্য তাকে আইন পেশা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
লিখিত নোটিশে বলা হয়, মাহাবুবুল ইসলাম ও তার সহযোগী আইনজীবীদের কর্মকাণ্ডে বার ও বেঞ্চের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। জেলা আইনজীবী সমিতির গঠণতন্ত্রের দ্বাদশ অধ্যায়ের ২০ এর ‘ক’ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছেন।
আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে তিনি জানান।
মানিকগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জামিলুর রশিদ খান জানান, আমরা সবাই ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলাম প্রতিবাদের নামে তিনি সিঙ্গাইর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ অক্টোবর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ বিষয়টি জানতে চেয়ে সমিতিকে এক পত্র দিয়েছেন। এ কারণে সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।