অবৈধ ইটভাটা অপসারণসহ ঢাকাবাসীকে বায়ুদূষণ থেকে বাঁচাতে উচ্চ আদালত যে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন করার জন্য আবারও সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দেন আদালত।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করীম। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন সাঈদ আহমেদ রাজা।
সংশ্লিষ্ট রিটের শুনানিতে হাইকোর্টকে জানানো হয়, সম্প্রতি বেশকিছু দিন ধরে বায়ুদূষণে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি মৌখিকভাবে এই আদেশ দেন আদালত।
সেদিন আদালত বলেছিলেন, ‘আপনারা কি আমাদের মেরে ফেলবেন নাকি। নির্দেশনা বাস্তবায়নে বার বার আপনাদের ডাকতে হয়। আমরা নিজেরাই লজ্জা পাচ্ছি। পরিবেশ দূষণরোধে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন তা ৫ ফেব্রুয়ারি রোববার জানান।’
তবে আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্টরা ৯ দফা নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে তা না জানানোয় পুনরায় দুই সপ্তাহের সময় দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এই ৯ দফা নির্দেশনা হলো-
১. ঢাকা শহরের মধ্যে বালি বা মাটি বহনকারী ট্রাকগুলোকে ঢেকে পরিবহণ করতে হবে।
২. যেসব জায়গায় নির্মাণকাজ চলছে সেসব জায়গার কনট্রাকটররা তা ঢেকে রাখবেন।
৩. এছাড়া ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর যে নির্দেশ ছিল, সে নির্দেশ অনুযায়ী যেসব জায়গায় এখনো পানি ছিটানো হচ্ছে না, সেসব এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. সড়কের মেগা প্রজেক্টের নির্মাণ এবং যেসব কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে, যেসব কাজ যেন আইন-কানুন এবং চুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন মেনে করা হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. যে যানবাহন কালো ধোঁয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করতে হবে।
৬. সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরাতন হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ দিতে হবে।
৭. যেসব ইটভাটা লাইসেন্সবিহীনভাবে চলছে সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
৮.পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইকিলিং বন্ধের করতে হবে।
৯. মার্কেট এবং দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে এবং তা মার্কেট ও দোকান বন্ধের পরে সিটি করপোরেশনকে ওই বর্জ্য অপসারণ করতে হবে।