বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির ৭ম জাতীয় সম্মেলন নিয়মতান্ত্রিক হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে এই সম্মেলনে ঘোষিত কমিটিও বৈধ নয় বলে দাবি করা হয়েছে। বলা হচ্ছে পূর্বের কেন্দ্রীয় কমিটি বহাল আছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংগঠনটির ৭ম জাতীয় সম্মেলনে অনিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রমের প্রতিবাদে কাউন্সিল অধিবেশন বয়কট করা সারা দেশের আইনজীবী প্রতিনিধিগণ এক বিবৃতিতে আজ শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশিত তথাকথিত ‘কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন’ সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে সারা দেশের বার সমূহে কর্মরত সংগঠনের প্রতিনিধিগণ বলেন, চলমান ঐক্য প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কতিপয়ের স্বেচ্ছাচারী ভূমিকার কারণে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন পণ্ড হয়ে যায়।
সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ১৫০ জন প্রতিনিধি অংশ গ্রহণ করেন। যাদের শতকরা ৯০ ভাগ কাউন্সিলে অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ঐক্যপ্রক্রিয়া বাতিল এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের নিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচনের চেষ্টার প্রতিবাদ জানান।
গণতান্ত্রিকভাবে কাউন্সিল পরিচালিত না হওয়ার প্রতিবাদে এক পর্যায়ে প্রতিনিধিগণ কাউন্সিল বয়কট করতে বাধ্য হন। এভাবে কোন কমিটি গঠন ব্যতিরেকেই ৭ম জাতীয় সম্মেলন শেষ হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির পূর্বের কেন্দ্রীয় কমিটি বহাল আছে।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক প্রেরিত বিবৃতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির ৭ম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দিয়ে কোনো বিষয় নির্বাচনী কমিটি গঠন করা হয়নি।
নিয়মানুযায়ী বিষয় নির্বাচনী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে প্রথমে সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা অনুমোদন করিয়ে সেই সংখ্যার আলোকে সুনির্দিষ্ট সংখ্যার নাম প্রস্তাব করতে হয় এবং এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির ভিতর ও বাহির থেকে প্রায় সম-সংখ্যক সদস্য নিয়ে বিষয় নির্বাচনী কমিটি গঠনের রেওয়াজ রয়েছে।
কিন্তু উক্ত সম্মেলনে নিয়মতান্ত্রিক কোনো পন্থা অবলম্বন না করেই সহ-সভাপতিগণ ভবিষ্যত কেন্দ্রীয় কমিটির নাম প্রস্তাব করবেন মর্মে মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়। বিভিন্ন রিপোর্টের উপর আলোচনা শেষ হওয়ার পর মঞ্চ থেকে পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা প্রদান করা হয়, যা অধিকাংশ প্রতিনিধিরা মেনে না নিয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন।
তখন মঞ্চ থেকে নতুন নাম প্রস্তাবের সুযোগ না দিয়ে বা প্রতিবাদী প্রতিনিধিদের বক্তব্য না শুনে বরং প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করতে থাকলে প্রায় অর্ধেকের বেশি প্রতিনিধি সম্মেলন বয়কট করেন। আরো অনেকেই সম্মেলন স্থলে উপস্থিত থেকেও সম্মেলনে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া ও কমিটির বিরোধীতা করেন।
ঐ কমিটি ঘোষণার সময় কমিটির মোট সংখ্যা অনুমোদন করানো হয়নি বা কত সদস্যকে কাউন্সিল অধিবেশনে নির্বাচন করা হবে বা কতজনকে কো-আপ্ট করা হবে তা অনুমোদন করানো হয়নি।
নিয়ম অনুযায়ী কমিটি প্রস্তাব করা হয় নির্বাচনী অধিবেশনে কিন্তু উক্ত সম্মেলনে কোনো নির্বাচনী অধিবেশন শুরু হয়নি। কারণ রেওয়াজ অনুযায়ী নির্বাচনী অধিবেশন শুরুর পূর্বেই পূর্ববর্তী কমিটি বাতিল ঘোষণা করে বিষয় নির্বাচনী কমিটির সদস্যরা এ অধিবেশন পরিচালনা করেন এবং অন্যরা মঞ্চ থেকে নেমে যান, কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয়নি।
উক্ত সম্মেলনের সকল পর্বে একজনই সভাপতিত্ব করেন কিন্তু তথা কথিত বিষয় নির্বাচনী কমিটিতে তিনি ছিলেন না। কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্য প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদন না করায় প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদিত হয়নি এবং ৬ষ্ঠ সম্মেলনে গঠিত কমিটি বাতিল ঘোষণা না করায় তা এখনো বহাল ও বলবৎ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির চতুর্থ সম্মেলনে সংগঠন বিভক্তির সম্মুখীন হয়। বিগত সময়ে সমিতির দুই অংশের ঐক্য অলোচনা অগ্রসর হওয়ার প্রেক্ষিতে ৭ম জাতীয় সম্মেলন ঐক্যবদ্ধভাবে অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।
এই ঐক্য প্রক্রিয়ার বিরোধী কতিপয় নেতা, হীন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ চরিতার্থ করতে চক্রান্তমূলকভাবে ততাকথিত নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছেন বলে প্রতিয়মান হয়। ঘোষিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ অধিকাংশ সদস্য ইতোমধ্যে উক্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান এবং নিজেদের নাম প্রত্যাহার করেছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মারফত ঘোষিত তথাকথিত ‘কেন্দ্রীয় কমিটি’ শুধুমাত্র অবৈধই নয়, দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের সাথে নির্লজ্জ প্রতারণাও বটে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির পূর্বের কেন্দ্রীয় কমিটি বহাল আছে এবং চলমান ঐক্য প্রক্রিয়া অগ্রসর করে শীঘ্রই ঐক্য সম্মেলন আহ্বান করা হবে বলে বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের সপ্তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে মো. ইয়াহিয়াকে সভাপতি, এম এ তাহেরকে নির্বাহী সভাপতি ও হাসান তারিক চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
সমিতির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতিতে নতুন কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এ সম্মেলনে সুপ্রিম কোট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর নূর দুলাল শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এ এইচ এম খালেকুজ্জামান।