জনগণ মানবিক ও সচেতন না হলে আইন-আদালত দিয়ে দেশের কোটি-কোটি মানুষকে ভালো করা সম্ভব না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। কীটনাশক প্রয়োগ করে ৫০টি তালগাছ নিধনের এক শুনানিতে উচ্চ আদালত এ মন্তব্য করেন।
অভিনব কায়দায় কীটনাশক প্রয়োগ করে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় সড়কের পাশে সরকারিভাবে লাগানো অর্ধশত তালগাছ নিধনের অভিযোগের শুনানি বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা পৌনে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, ‘আপনারা হয়তো মনে করবেন যে, তালগাছের মতো ছোট্ট একটা বিষয়ও হাইকোর্ট দেখে? হ্যাঁ, আমাদের দেখতে হয়। কারণ, সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয় জাগ্রত বিবেক। আমরা তাল গাছগুলোতে বিষ দেওয়ার সংবাদ দেখে আহত হয়েছি। এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। সেই লোককে হাজার সালাম জানাচ্ছি, যিনি এই গাছগুলো লাগিয়েছেন।’
শুনানির একপর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘আইন-আদালত দিয়ে দেশের কোটি-কোটি মানুষকে ভালো করা সম্ভব না, যদি না আমরা নিজেরাই মানবিক ও সচেতন না হই।’
এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি তালগাছ নিধনের অভিযোগে শাহরিয়ার আলমকে হাইকোর্ট তলব করেন। এছাড়া বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তাকে যৌথভাবে সরেজমিন তালগাছ নিধনের বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। ওই আদেশ অনুসারে শাহরিয়ার আলম হাইকোর্টে হাজির হন।
শুনানি চলাকালীন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অভিযুক্ত শাহরিয়ার আলমকে এজলাসে দাঁড়িয়ে থাকার আদেশ দেন। হাইকোর্টের এজলাসে দিনভর দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি।
আদালতে শাহরিয়ার আলমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. জাহিদুল হক জাহিদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী।
শুনানিতে শাহরিয়ার আলম নিজের ব্যাখ্যায় অভিযোগ অস্বীকার করেন। অন্যদিকে বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ ঘটনায় তাদের সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন ছবিসহ দাখিল করেন। পরে আদালত চলাকালীন (বেলা পৌনে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত) এজলাসে দাঁড়িয়ে থাকতে শাহরিয়ার আলমকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। ওইদিন শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও একটি জাতীয় পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধিকেও হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
‘কীটনাশক পুশ করে তালগাছ নিধন’ শিরোনামে গত ২৮ জানুয়ারি সমকালসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে পরে সম্পদকীয় প্রকাশ করে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক।
বিষয়টি নজরে আসার কথা উল্লেখ করে ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে বাংলায় দেওয়া আদেশে হাইকোর্ট বলেন, ‘খবরের উল্লেখিত ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সবুজ বনায়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর বৃক্ষ রোপণের অঙ্গীকারকে বিবেচনায় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দিচ্ছি।’
রুলে ৫০টি তালগাছ নিধনে কীটনাশক প্রয়োগের জন্য কেন শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।