প্রয়াত তারকা অভিনেতা শাহর মৃত্যু রহস্যের ওপর আলোকপাত করে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই প্রযোজিত ও তানিম রহমান অংশু পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’ -এর সম্প্রচার বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
সালমান শাহ’র মামা আলমগীর কুমকুমের পক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার চৌধুরী মুর্শেদ কামাল টিপু তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শকে (আইজিপি) এ নোটিশ প্রেরণ করেন।
নোটিশ প্রেরণের বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন ব্যারিস্টার চৌধুরী মুর্শেদ কামাল টিপু । তিনি জানান, নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওয়েব সিরিজটির সম্প্রচার বন্ধ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনে সালমান শাহর বাসা থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
দুই যুগ ধরে আদালতে ঝুলে থাকা মামলার প্রথমে তদন্তভার পায় পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), এরপর নানা সংস্থা ঘুরে ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। মামলার রায় না হওয়ায় সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন, ২৭ বছরেও সেই জট এখনো খোলেনি।
নোটিশে বলা হয়, নায়ক সালমান শাহের মর্মান্তিক অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা আদালতের বিচারাধীন বিষয় এবং এই পরিস্থিতিতে যেকোন ধরনের কল্পকাহিনী/রহস্য/দুঃসাহসিক ধরনের নাটক মামলার সুষ্ঠু তদন্তকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করবে। ন্যায়বিচারের পথে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২৫ এবং ২৬(১) দ্বারা প্রদত্ত বিধানের অধীনে যে কোনও ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া তার পরিচয়ের তথ্য বিক্রি করা, সরবরাহ করা এবং ব্যবহার করা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। ফলে প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের জীবনের তথ্যের ভিত্তিতে নির্মিত ওয়েব সিরিজটি বেআইনি বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
যদিও বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯(২) অনুচ্ছেদ দ্বারা বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে সেই অধিকারটি নিরঙ্কুশ অধিকার নয় যা যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে যদি পাবলিক অর্ডারের মানহানি, নৈতিকতা হ্রাস পায় বা এর সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয় যা বিচারের সাধারণ কোর্সের ক্ষেত্রে আদালত অবমাননার সাথে জড়িত।
যদি উল্লিখিত ওয়েব সিরিজটি সম্প্রচারিত হয় এবং প্রদর্শন করা হয় তবে সম্ভবত ওয়েব সিরিজটি নায়ক সালমান শাহের অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে ন্যায়বিচারের স্বাভাবিক নিয়মে হস্তক্ষেপ করবে বলে নোটিশে বলা হয়।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি সালমান শাহর পরিবারের তরফ থেকে সিরিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে দাবি করা হয়, এটি সালমান শাহকে নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তি বন্ধ না করলে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
তবে সালমান শাহর পরিবারের আপত্তি উপেক্ষা করে গত ৩ মার্চ অনেকটা নীরবেই আট পর্বের সিরিজটি মুক্তি দিয়েছে হইচই। পর্বগুলোর নাম—‘ফিরে আসার গল্প’, ‘বন্ধু নাকি শত্রু’, ‘চেনা যখন অচেনা’, ‘স্নেহের ছলনা’, ‘উত্থান-পতন’, ‘প্রণয়ের পালাবদল’, ‘পতনের প্রস্তুতি’, ‘হত্যা নাকি আত্মহত্যা?’