চলতি মৌসুমে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত হজ প্যাকেজকে অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। উচ্চমূল্যের এই প্যাকেজের সঙ্গে জড়িতরা গুনাহর ভাগিদার হবেন বলেও মন্তব্য করেন আদালত।
হজের প্যাকেজ মূল্য পুনঃনির্ধারণ চেয়ে রিটের শুনানিতে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট গাজী মো. মহসীন, অ্যাডভোকেট আশরাফ-উজ জামান খান, অ্যাডভোকেট আহসান উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ।
শুনানিতে হজের প্যাকেজ কীভাবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হলো এবং হজ প্যাকেজের বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ অবস্থান কী তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে এ তথ্য জানাতে বলেছেন আদালত।
আগামীকাল এ রিটের পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এদিন শুনানিতে যা হল
শুনানিতে আদালত বলেন, এবার হজের এত খরচ ধরা হয়েছে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, আমরা নিজেরা এত খরচের প্যাকেজ দেখে ভয় পেয়ে গেছি।
ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অথর্ব মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে আদালত বলেন, হজে যাওয়ার জন্য এত খরচ নির্ধারণ করার ফলে যারা উপযুক্ত তারা হজে যেতে পারছেন না। এটা একটা অমানবিক হজ প্যাকেজ। এ প্যাকেজ তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত তারা গুনাহর ভাগি হবেন।
আদালত বিমান ভাড়া প্রসঙ্গে বলেন, কোটি কোটি টাকা লোকসানের দায় হজ যাত্রীদের ওপর চাপাতে পারে না বিমান। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় হজ ফান্ড আছে। বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার ফান্ড কম। একমাত্র বঙ্গবন্ধু এ বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন। তারপরে এ বিষয়ে কেউ চিন্তা করেনি।
সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বাইরে অন্য যেকোনো এয়ারলাইন্সের টিকিট ক্রয় করার সুবিধা না থাকার বিষয়ে আদালত বলেন, এখানে ব্যবসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গত ১২ মার্চ হজের প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে পুনরায় প্যাকেজ ঘোষণা করতে রিট দায়ের করা হয়। রিটে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়াও যেকোনো এয়ারলাইন্সে টিকিট কেটে হজে যাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। ধর্ম সচিব, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।
হজের প্যাকেজ মূল্য সংশোধনে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ
এর আগে গত ৬ মার্চ হজের প্যাকেজ মূল্য সংশোধন করে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আল কোরআন স্টাডি সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান ধর্ম মন্ত্রণালয়কে এ নোটিশ পাঠান।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সৌদি আরব, ইরান, তুরস্কের সরকারকে নোটিশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে হজের প্যাকেজ পুনঃনির্ধারণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে জানানো হয়। ৭ দিন পার হলেও হজের প্যাকেজ কমানোর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এ রিট দায়ের করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী আশরাফ উজ জামান।
৬ মার্চ আইনজীবী আশরাফ উজ জামান বলেছিলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ-সৌদি-বাংলাদেশ রুটে প্লেন ভাড়া ৭৬ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতি বছর দুই দেশের সরকার হজ যাত্রীদের সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট কিনতে বাধ্য করে। এ কারণে টিকিট কিনতে হজ যাত্রীদের স্বাধীনতা ধ্বংস হয়।
এসব কারণসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে চার লাখ টাকার মধ্যে হজ প্যাকেজ-২০২৩ সংশোধন, পরিবর্তন এবং পুনঃনির্ধারণ করতে নোটিশে অনুরোধ করা হয়।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমে হজের খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। অন্যদিকে কোরবানি ছাড়াই এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ যাত্রীদের জন্য সর্বনিম্ন খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। আগের বছর এটি ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে দেড় লাখ টাকা বেড়েছে।