বিচারককে ‘ভাত খেতে দেবেন না’ ও ‘চাকরি করতে দেবেন না’ বলে কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) সাইমুম সরওয়ার কমলের হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে আইনজীবীরা।
আজ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে সাধারণ আইনজীবীবৃন্দ ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় অ্যাডভোকেট আমির হোসেন, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম নুরু, দুদক পিপি অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম, অ্যাডভোকেট নুর মোহাম্মদ মামুন, অ্যাডভোকেট সস রাখাইন, অ্যাডভোকেট মো. আমান, অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম, অ্যাডভোকেট মো. শাহীন ও অ্যাডভোকেট রিদুওয়ান আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, সংসদ সদস্য কর্তৃক বিচারক সম্পর্কে এমন বক্তব্য অনভিপ্রেত ও আদালত অবমাননার শামিল। তাঁর এমন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা। অন্যথায় বিচারককে নিয়ে এমন বক্তব্য প্রদান ও আদালত অবমাননার অভিযোগে সাইমুম সরওয়ার কমলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
এর আগে গত শনিবার (১১ মার্চ) কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রামু উপজেলা শাখা আয়োজিত শিক্ষক মিলনমেলা, নবীনবরণ, বিদায় ও কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারককে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এ হুমকি দেন।
এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, ‘রামুর একজন শিক্ষক। নাম জসিমউদ্দিন। তার বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার আইনে মামলা হয়েছে। আমি জজ সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত বিচার, ঘটনা মিথ্যা, কোনো ঘটনা নেই। জমি নিয়ে গণ্ডগোল। সেখানে কোনো মারামারি হয়নি। কোনো ভিডিও ফুটেজ নেই। কোনো সাক্ষী নেই। কিন্তু একজন পেশকার একজন জজকে ম্যানেজ করে একটা দ্রুতবিচার আইনে মামলা দিয়েছে।’
‘ইনশাআল্লাহ আমি বেঁচে থাকতে তাকে জেলে যেতে দেব না। তাকে যদি জেলে যেতে হয়, তা হলে আমি বেঁচে থাকতে যে জজ সাহেব মিথ্যা মামলা করেছে, তাকে আমি জীবনে ভাত খেতে দেব না। তাকে আমি চাকরি করতে আর দেব না। এই আমার কথা।’
এমপি কমলের বিবৃতি
এদিকে আইনজীবীদের মানববন্ধনের পর গণমাধ্যমে এক বিবৃতি দেন এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল। এতে তিনি দাবি করেন, আমার বক্তব্যে ভাষাগত ত্রুটি থাকতে পারে তবে আমি মিথ্যা কিছু বলিনি।
সংশ্লিষ্ট কোর্ট একপেশে কথা শুনে মামলা গ্রহণ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মামলাটি মিথ্যা এবং ওই কোর্টে মিথ্যা মামলা নেওয়ার রেওয়াজ হয়ে গেছে। কক্সবাজারে এতো বিচারক আছে, কারও বিরুদ্ধে তো এতো কথা আসে না। শুধু ওই কোর্টের বিরুদ্ধে কেন এতো কথা আসে?
যারা মানববন্ধন করেছেন তাঁরা বিপক্ষ দলের উল্লেখ করে এমপি কমল বলেন, তাঁরা ৫২’র ভাষা আন্দোলনের বিপক্ষের, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের, তাঁরা জঙ্গিবাদের সমর্থক।
তাঁদের প্রত্যেককে তিনি চেনেন উল্লেখ করে বলেন, যে ৪-৫ জন জুনিয়র ল’ইয়ার সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা হয় না বুঝে ছিলেন কিংবা কারো কথায় প্ররোচিত হয়ে ছিলেন।
এসময় এমপি কমল আরো বলেন, তাঁরা যা করেছেন তা জনগণের পক্ষে করেননি। তারাই তো গত ১ মাস আগে কক্সবাজারে জজ সাহেবকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।