মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : হত্যার দায়ে কক্সবাজারে মহিব উল্লাহ, রফিক উল্লাহ, জসিম উদ্দিন নামক তিন ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। একইসাথে তাদের প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ১ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ (ভা:) নিশাত সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মহিব উল্লাহ, রফিক উল্লাহ ও জসিম উদ্দিন তিন ভাই কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের রাজোয়ার ঘোনা গ্রামের নুর কাদের প্রকাশ নুরুল কাদেরের পুত্র।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী এবং আসামীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক মামলাটি পরিচালনা করেন।
রায়ের ৯০ হাজার টাকা অর্থদন্ড আসামীদের কাছ থেকে আদায় সাপেক্ষে ১০ হাজার টাকা মামলার খরচ বাবদ রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা করতে এবং অবশিষ্ট ৮০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ নিহত আবদুল কাদেরর স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে প্রদানের জন্য বিচারক নিশাত সুলতানা তাঁর রায়ে উল্লেখ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফরিদ উদ্দিন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০০২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬ টার দিকে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের রাজুয়ার ঘোনা গ্রামের আনোয়ারা বেগমের স্বামী আবদুল কাদের স্থানীয় মঈনুল উলুম মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশে রাস্তার মাথায় আসলে আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আবদুল কাদেরকে লোহার রড, দা, লাটি, হন্তা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।
এ ঘটনায় নিহত আবদুল কাদেরের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে মহেশখালী থানায় পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারায় ৮ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মহেশখালী থানা মামলা নম্বর ১০/২০০২ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ১১৮/২০০২ (মহেশখালী) এবং এসটি মামলা নম্বর : ১৮/২০০৭ ইংরেজি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মহেশখালী থানার এসআই কামরুজ্জামান এজাহারের ৮ জন আসামীর মধ্যে ৪ জনকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত করে আদালতে বিচার প্রার্থনা পূর্বক আমলী আদালতে ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। চার্জশীটে যাদের অভিযুক্ত করা হয় তারা হলো : মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের রাজোয়ার ঘোনার তজু মিয়ার পুত্র নুর কাদের প্রকাশ নুরুল কাদের এবং তার ৩ পুত্র মহিব উল্লাহ, রফিক উল্লাহ, জসিম উদ্দিন।
বিচার ও রায়
মামলাটি বিচারের জন্য ২০০৭ সালের ১৩ জুলাই চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে তাদের জেরা, সুরতহাল প্রতিবেদন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও আলামত পর্যালোচনা, আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ সকল বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়।
রায় ঘোষণার দিনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ (ভারপ্রাপ্ত) নিশাত সুলতানা মামলার আসামী মহিব উল্লাহ, রফিক উল্লাহ, জসিম উদ্দিনকে ১৮৬০ সালের ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করেন।
মামলার চার্জশীটভুক্ত অপর আসামী যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত ৩ জনের পিতা নুর কাদের প্রকাশ নুরুল কাদের মৃত্যুবরণ করায় বিচারক নিশাত সুলতানা তাকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেন।