রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ ফাতেমা নাসরিনকে (৪৫) হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ন্যায় বিচার দাবি করেছেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের স্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহনাজ বাবলী।
আজ শনিবার (১৮ মার্চ) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ফাতেমার মৃতদেহ দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ দাবি জানান।
মৃত ফাতেমা নাসরিন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের ভাতিজি।
ন্যায় বিচার দাবি করে শাহনাজ বাবলী বলেন, ফাতেমা ভাতিজি হলেও আমরা তাকে মেয়ে হিসেবে জানতাম। মেয়েটা অনেক গুণবতী ছিল। ১৯ বছরের সংসারে মায়ার কারণে শত অত্যাচার সহ্য করেও নীরব ছিল। আমাদের কাছে কখনও স্বামীর অত্যাচারের কথা মুখ ফুটে বলতো না। নির্মম অত্যাচারে আমার মেয়েটা শেষ পর্যন্ত চলেই গেল। এখন তো ফিরে পাব না।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের মেয়ে হত্যার ন্যায় বিচার চাই। এটাই আমাদের চাওয়া। আর কিছু চাওয়া নেই আমাদের। ফাতেমা হত্যার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে আমরা লড়ে যাব।
এর আগে ভাতিজির মৃত্যুর খবর শুনে সকালে হাসপাতালে ছুটে যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। এসময় উপস্থিত ছিলেন নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন, শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া।
যেভাবে ফাতেমা যৌতুকের বলি হন
শুক্রবার (১৮ মার্চ) দিবাগত রাত ১টার দিকে আগারগাঁও নিওরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গৃহবধূ ফাতেমা নাসরিন (৪৫)। এ ঘটনায় ভিকটিমের বড় বোন আরজিনা বেগম (৫২) বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় মূল অভিযুক্ত করা হয় ভিকটিমের স্বামী মির্জা সাখাওয়াত হোসেনকে (৪৯)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ফাতেমা নাসরিন ও মির্জা সাখাওয়াত হোসেনের দীর্ঘ ১৯ বছরের দাম্পত্য জীবন। দাম্পত্য জীবনে ১৭ বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। তবে বিয়ের পর থেকে সাখাওয়াত বিভিন্ন সময় ফাতেমার কাছে যৌতুক দাবি করে আসছিল।
সাখাওয়াত বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীকে চাপ দেয় যে, সে ঠাকুরগাঁও এ অবস্থিত তার পৈতৃক বাড়ি বিক্রি করে এনে যেন তাকে ১ কোটি টাকা দেয়। কিন্তু ওই পৈতৃক বাড়িতে আরও অনেকের অংশ রয়েছে, তাই একা বিক্রি করা যাবে না বলে ফাতেমা তার স্বামী সাখাওয়াতকে জানায়।
এতে সাখাওয়াত ক্ষিপ্ত হয়ে ফাতেমাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন। সন্তান ও সংসারের কথা চিন্তা করে এসব অত্যাচার মুখবন্ধ করে সহ্য করে আসছিলেন ফাতেমা। কিন্তু দিন দিন সাখাওয়াতের নির্যাতন বেড়ে যায়।
ফাতেমা আর সহ্য না করতে পেরে জানুয়ারি মাসে পঞ্চগড় সদর থানায় নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাখাওয়াত গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। পরে তিনি জামিনে বের হয়ে আবারও যৌতুকের টাকা জন্য ফাতেমাকে চাপ দিতে থাকেন।
গত ৮ মার্চ যৌতুকের টাকার দাবিতে সাখাওয়াত তার মোহাম্মদপুরের বাসায় ফাতেমাকে চাপ দিতে থাকে। এতে প্রতিবাদ করলে সাখাওয়াত ধারালো বটি ও মশলা বাটার কাঠের বাটলা দিয়ে ফাতেমার মাথায় থেতলিয়ে দেয়। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে।
সর্বশেষ যখন সাখাওয়াত তার স্ত্রীকে দা দিয়ে জবাই করতে উদ্যত হয় তখন তাদের সন্তান এসে বাধা দেয়। পরে ফাতেমাকে দ্রুত উদ্ধার করে আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি গতকাল রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার (১৮ মার্চ) সকালে মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, গতকাল রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফাতেমা মারা গেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে স্বামীর নির্যাতনে ফাতেমার মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় মোহাম্মদর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ফাতেমার স্বামীকে আমরা ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছি। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।