প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বার নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে, সেখানে তো সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকার, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আমীর-উল ইসলাম ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন রয়েছেন। তাঁরা থাকতে সেখানে কেন আমাকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এমন প্রশ্ন তো কেউ তোলেন না? তাঁরা কি প্রধান বিচারপতির চেয়ে কম জ্ঞানী?’
সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতির সাতক্ষীরায় সফর উপলক্ষে আইনজীবী সমিতি মঙ্গলবার (২১ মার্চ) এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এ সময় প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, রাষ্ট্রের মালিক জনগণই। তাঁরা যেন আদালতে এসে বিচার থেকে বঞ্চিত না হন। এই জনগণ যদি কোনো কারণে বিচারালয়ে এসে হয়রানির শিকার হয়, সংক্ষিপ্ত সময়ে যদি বিচার না পায়, তাহলে একদিন তারা বলবে দেশে বিচার-আচার নেই অর্থাৎ বিচার বিভাগের প্রতি যে আস্থাহীনতা এইটা দিনে দিনে বাড়বে, আমরা এটা হতে দিতে পারি না। রাষ্ট্রের অন্যতম অঙ্গ বিচার বিভাগকে আমরা দুর্বল হতে দেব না।
“যারা মাসের পর মাস বছরের পর বছর ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য আদালতে ঘোরে, তাদের যেন একদিন আগে হলেও বাড়িতে পাঠাতে পারি। অন্তত একদিন হলেও সে স্বস্তিতে থাকবে এবং বলবে আমার মামলা দ্রুত শেষ হয়েছে।”
আইনজীবী ও আইনজীবীর সহকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মানুষের কষ্ট ধারণ করতে হবে। বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আপনারা বিচার বিভাগকে গতিশীল রাখার চেষ্টা করবেন। আর বিচার বিভাগ গতিশীল থাকলে মামলার জট কমে আসবে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমাদের দেশের মানুষ যখন অভিশাপ দেয় তখন দুটো কথা বলে, হয় বলে তুই দ্বিতীয় বিয়ে কর, না হয় বলে, তোর বাড়িতে মোকদ্দমা ঢুকুক। মোকদ্দমায় পড়ে মানুষ দিনের পর দিন বছরের পর বছর একদম সর্বস্বান্ত হয়ে যায়।
“এটা তো একটা স্বাধীন দেশে হতে পারে না। আমরা হতে দিতে পারি না। এজন্যে একাত্তর হয়নি, এই জন্যে ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দেয়নি, ২ লক্ষ মা-বোন ইজ্জত দেয়নি।”
প্রত্যেক রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ আছে – শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ।
প্রত্যেকটা অঙ্গ বা বিভাগ যাদি সুষ্ঠুভাবে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে তবে কোনো সমস্যা থাকার কথা না এবং এটা করতে পারলে রাষ্ট্র ও দেশ অবশ্যই এগিয়ে যাবে বলে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মনে করেন।
বিচার বিভাগকে একটি পাখির সঙ্গে তুলনা করে প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, বিচার বিভাগ যদি একটি পাখি হয়, বার তার একটি পখা এবং বেঞ্চ অপর একটি পাখা। পাখির যদি একটি ডানা ভেঙে যায় বা দুর্বল হয়ে যায় ওই পাখিটি উড়তে পারে না।
“ঠিক তেমনি বার যদি দুর্বল হয়, বার যদি সঠিকভাবে বেঞ্চকে আইনি সহযোগিতা না করে, তাহলে বেঞ্চ থেকে বার ভালো জাজমেন্ট আশা করবে কেমন করে?”
সরকারি কৌঁসুলি শম্ভুনাথ সিংহের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ, সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোহম্মাদ আব্দুল আলিম আল রাজী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমায়ূন কবির, পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাতক্ষীরা ল কলেজের অধ্যক্ষ এস এম হায়দার প্রমুখ।
প্রধান বিচারপতি বেলা তিনটার দিকে সাতক্ষীরা জজ কোর্টে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামে একটি বিশ্রামাগার উদ্বোধন করেন। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে স্মৃতিবিজড়িত সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ পরিদর্শন করেন তিনি। তিনি সেখানে কলেজজীবনের স্মৃতিচারণা করেন। প্রধান বিচারপতি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ১৯৭৫-৭৬ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। এ সময় তাঁকে কলেজের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সরাসরি শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, সহপাঠী কুমিরা বালক উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খগেন্দ্রনাথ দাস প্রমুখ।