পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বন্ধে চিঠি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। চিঠিতে বেআইনি অগ্রাধিকারসহ বিভিন্ন অনিয়ম বন্ধ ও টোকেন সিস্টেম চালু করে ডিজিটাল বোর্ডে সিরিয়াল প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে।
ঢাকার বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক বরাবর বুধবার (২২ মার্চ) ডাকযোগে এ চিঠি পাঠিয়েছেন অ্যাডভোকেট মো. আবু তালেব।
চিঠিতে বলা হয়, পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বেআইনি অগ্রাধিকার দেওয়াসহ যেকোনো অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। সেবা প্রার্থীদের লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকা প্রথা বাতিল করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে টোকেন সিস্টেম চালু করে ও ডিজিটাল বোর্ডে সিরিয়াল প্রদর্শন করতে হবে। সেই সঙ্গে মানুষের বসার ব্যবস্থা ও বিনামূল্যে খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য ও সমান নিয়ম চালু করতে হবে, যেন কোনো ব্যক্তি বিশেষ অবৈধ কোনো সুবিধা নিতে না পারেন। এসব কার্যক্রম হাতে নিয়ে গৃহীত ব্যবস্থা ও কার্যক্রম লিখিতভাবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে অনুরোধ করেন এই আইনজীবী। অন্যথায় উপযুক্ত প্রতিকার চেয়ে আদালতে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার কথা বলা হয়েছে।
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে চিঠিতে এই আইনজীবী বলেন, গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ) পূর্বনির্ধারিত সময়ে পরিবারের সদস্যদের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলার জন্য দুপুর ১টায় পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হই। লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে ৩টার দিকে সিরিয়াল পাই। সিরিয়াল পেয়ে পুনরায় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সব কাগজপত্র অফিসারের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করিয়ে নেই। এরপর পুনরায় একটি কক্ষে সিরিয়াল দিয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করি।
চিঠিতে পরিচালককে উদ্দেশ্য করে এই আইনজীবী বলেন, আপনার অফিসের সার্বিক অব্যবস্থাপনা আমাকে দারুণভাবে কষ্ট দিয়েছে। ডিজিটাল ও স্মার্ট-বাংলাদেশ সরকারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে যেকোনো সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে ও স্মার্টলি প্রদান করা। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের অনেক অফিস, বেসরকারি ব্যাংক ও বিমা অফিসে কেউ সেবা নিতে এলে তাদের টোকেন প্রদান ও ডিজিটাল বোর্ডে/স্ক্রিনে সিরিয়াল দেখানোর মাধ্যমে সেবার অগ্রগতি নিশ্চিত করা হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রচলিত আইন, বিধি ও সিটিজেন চার্টারে অনুসারে সহজলভ্য ও ভোগান্তিহীন পাসপোর্ট পাওয়া আমার ও আমার মতো সাধারণ নাগরিকদের জন্য অনেক দুর্লভ ও ভোগান্তির বিষয়। আনসার সদস্যরা হ্যান্ড মাইকে প্রচার করে আসছিলেন যে, আপনারা সবাই লাইনে দাঁড়ান ও কোনো দালালকে টাকা দেবেন না।’ এ ঘোষণা থেকেই স্পষ্ট, মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সিরিয়াল নিতে হয় ও সেখানে দালালের দৌরাত্ম্য রয়েছে।
আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে সিরিয়াল নেওয়া, কাগজপত্র দেখানো, ফিঙ্গার দেওয়া ও ছবি তোলার কাজ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে করেছি। একই সময়ে অনেক মানুষকে কোনো লাইন না ধরে কিংবা অন্য নিয়ম না মেনে সরাসরি ফিঙ্গার দেওয়া ও ছবি তোলার রুমে গিয়ে দ্রুত কাজ সেরে চলে গিয়েছেন। যেকোনো নাগরিক এসব কাজের জন্য পাসপোর্ট অফিসে গেলে একটি সিরিয়াল টোকেন নিজে পাঞ্চ করে হাতে নিতে পারেন কিংবা স্টাফের মাধ্যমে পেতে পারেন। ডিজিটাল বোর্ডে সুনির্দিষ্ট বুথ নং প্রদর্শন করে সিরিয়াল ও সময় দেখানোর ব্যবস্থা করা কোনো দুরূহ কাজ নয়। তাতে মানুষের শারীরিক উপস্থিতি কমে।
এত বড় অফিস ভবন অথচ সুনির্দিষ্ট রুমগুলোর সামনে বসার স্থান না দিতে পারাটা সত্যিই দুঃখজনক বিষয়। সেখানে অবস্থানকাল পাঁচ ঘণ্টা সময়ে দেখিনি যে, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা কিংবা বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য ছবি তোলা কিংবা আনুষঙ্গিক কাজের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা রয়েছে।