এম.এ. সাঈদ শুভ : একটা স্বাধীন ভূখন্ড, একটা মানচিত্র, একটা পতাকা অর্জন পৃথিবীর যেকোনো স্বাধীনতাকামী মানুষদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আজকের দিনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্জনের অভিপ্রায়ে বজ্রকন্ঠের যে ঘোষণা তা আমাদের জাতীয় জীবনের সবথেকে গৌরবান্বিত একটি দিন। পরাধীনতার শৃঙ্খল ও শোষণের দীর্ঘদিনের গ্লানির দুর্ভাগ্যজনক ইতিহাস রয়েছে আমাদের। শত শত বছর ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার করুণ ইতিহাস আমাদের পূর্বপুরুষদের!
যদিও এই অঞ্চলের স্বাধীনতাকামী মানুষেরা (ক্ষুদ্র অংশ হলেও) দীর্ঘসময় তারা ঔপনিবেশিক শাসনকে বিচ্ছিন্নভাবে চ্যালেঞ্জ করেছে! বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ না করতে পারায় সংগ্রামে সফল হয়নি, শোষণ ও জুলুম দীর্ঘায়িত হয়েছে। অবশেষে ঐক্যবদ্ধ এক দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমের আমরা এই মহামূল্যবান স্বাধীনতাকে অর্জন করেছি। এই অর্জন আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। কিন্তু আমাদের এই অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা সবসময় ওঁৎ পেতে ছিলো। তারা আমাদের বিভক্ত করে এই অর্জনকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছে বারবার!
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, যদি আমরা বিভক্ত হয়ে যাই এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও মতাদর্শের অনৈক্যের দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে আত্মঘাতী সংঘাতে মেতে উঠি, তাহলে যারা এদেশের মানুষের ভালো চান না ও এখানাকার সম্পদের ওপর ভাগ বসাতে চান তাদেরই সুবিধা হবে এবং বাংলাদেশের নির্যাতিত, নিপীড়িত, ভাগ্যাহত ও দুঃখী মানুষের মুক্তির দিনটি পিছিয়ে যাবে।
এই কঠিন সত্য বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। এটা ধ্রুব সত্য যে, আমাদের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় অনৈক্য ও বিভক্তির কারণে স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও আমরা কি কাঙ্খিত মুক্তি লাভ করতে পেরেছি? আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।
আজ আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার দিন। আমরা কি পেরেছি আমাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে? আমরা কি পারছি আমাদের লাল-সবুজের প্রিয় পতাকাকে সমুন্নত করতে? আমাদের মজলুম, নিপীড়িত মানুষের মুক্তির দিন কি আরো প্রলম্বিত হচ্ছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের জানা! আমাদের সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দেশ মাতৃকার জন্য যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে নেয়ার সংগ্রামে সামিল হওয়া জরুরী। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়কদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
লেখক : জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট