পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। কারণ ৭৫ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী বিচারপতিকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। বিচারপতি মুসাররাত হিলালি ৭ জুলাই পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে শপথ নেন, সেইসঙ্গে বিচারপতি হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতে পা রাখেন।
তিনি এই বছরের এপ্রিলে পেশোয়ার হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া প্রথম নারী ছিলেন। ইসলামাবাদে সুপ্রিম কোর্টের আনুষ্ঠানিক হলে এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বিচারপতি হিলালিকে শপথবাক্য পাঠ করান।
বিচারপতি হিলালির পদোন্নতির পর, শীর্ষ আদালতের বিচারকের সংখ্যা মোট ১৭ জনের মধ্যে ১৬ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রপতি ড. আরিফ আলভি ৫ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিলালির নিয়োগের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন।
বিচারপতি হিলালির নিয়োগ মাইলফলক
বিশিষ্ট পাকিস্তানি আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর বলেছেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। কারণ বিচারপতি হিলালি শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টের দ্বিতীয় নারী বিচারকই নন বরং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের প্রথম নারী বিচারকও হয়েছেন।”
পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি) বিচারপতি হিলালির নিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, “বিচার বিভাগে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের উন্নতির দিকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যদিও এখনও অনেক দূর যেতে হবে।”
গত বছরের জানুয়ারিতে বিচারপতি আয়েশা মালিক দেশের ইতিহাসে সুপ্রিম কোর্টের প্রথম নারী বিচারপতি হন। সম্মানিত বেঞ্চে আরেকজন অত্যন্ত দক্ষ নারী আইনবিদকে যুক্ত করার মাধ্যমে, সুপ্রিম কোর্ট প্রতিনিধিত্বমূলক আইনি ল্যান্ডস্কেপের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী নজির স্থাপন করেছে।
এই নিয়োগটি এমন একটি দেশে বিচার বিভাগে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের উন্নতির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যেখানে সামগ্রিকভাবে নারী বিচারকের সংখ্যা ১৭ শতাংশ এবং উচ্চ আদালতে ৪.৪ শতাংশের নিচে।
এইচআরসিপির বিবৃতি অনুসারে, এই পদক্ষেপ ন্যায়বিচারের মানের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।
সংস্থাটি জোর দিয়েছিল যে বেঞ্চে নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির ফলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে, দুর্বল গোষ্ঠীগুলি ভরসা পাবে।
এক নজরে বিচারপতি মুসাররাত হিলালির ক্যারিয়ার
সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগের আগে, বিচারপতি হিলালি পেশোয়ার হাইকোর্টের প্রথম প্রধান নারী বিচারপতি হিসেবে এক দশক ধরে দায়িত্ব পালন করেন।
মুসাররাত হিলালির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
বিচারপতি হিলালির আইনজীবন দীর্ঘ। ১৯৬১ সালের আগস্ট মাসে পেশোয়ারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের খাইবার ল’ কলেজ থেকে আইন ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৮৩ সালে জেলা আদালত এবং ১৯৮৮ সালে হাইকোর্টের একজন আইনজীবী হন। পরে তিনি ২০০৬ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত হন।
এছাড়াও হিলালি একজন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী, এইচআরসিপির সদস্য ও নেতা হিসেবে কাজ করছেন।
বিচারপতি হিলালি পাকিস্তানের আইনি ব্যবস্থায় নারীর অধিকারের প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ছিলেন বারে সেক্রেটারি পদে প্রথম নির্বাচিত নারী পদাধিকারী।
এছাড়াও তিনি ছিলেন খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) এর প্রথম নারী অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল এবং কেপি এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন ট্রাইব্যুনালের প্রথম নারী চেয়ারপারসন।
২০১১ সালে, তিনি কর্মক্ষেত্রে নারীদের হয়রানির বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য প্রথম ন্যায়পাল নিযুক্ত হন।