জাপানি বংশোদ্ভূত সেই দুই শিশুকে নিজ জিম্মায় (হেফাজতে) রাখতে বাবা ইমরান শরিফের করা আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। যার ফলে সেই দুই শিশু মা নাকানো এরিকোর জিম্মাতেই থাকবেন।
আজ রোববার (১৬ জুলাই) ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এবং পারিবারিক আপিল আদালতের বিচারক এ. এইচ. এম. হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার আদালত এ আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী আমিনুল ইসলাম বিষয়টি জানিয়েছেন।
এর আগে গত ১২ জুন জাপানি দুই শিশু কার জিম্মায় থাকবে এ সংক্রান্ত আপিল শুনানিতে বিচারকের প্রতি আস্থাহীনতায় আদালত পরিবর্তন চেয়ে শিশুদের বাবা ইমরান শরীফের আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মামনুন রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর ফলে এ মামলার বিচার হবে ঢাকা জেলা জজ আদালতে বলে জানিয়েছিলেন। গত ৬ জুন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ইমরান শরীফের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী আদালত পরিবর্তন চেয়ে আবেদন করেন।
গত ৯ মার্চ জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে বিদেশে নিয়ে যেতে জাপানি মায়ের আবেদন নাকচ করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে দুই শিশু কার জিম্মায় থাকবে এ সংক্রান্ত আপিল জেলা জজ আদালতকে তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আদালত। এ সময় পর্যন্ত দুই শিশু জেসমিন মালিকা মায়ের কাছে ও লাইলা লিনা বাবার কাছে যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ২ ফেব্রুয়ারি আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাপানি দুই শিশুর মধ্যে ছোট শিশু নাকানো লায়লা লিনা বাবার কাছে একদিন ও মায়ের কাছে একদিন করে থাকবে; আর বড় মেয়ে থাকবে মায়ের হেফাজতেই। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এদিকে দুই সন্তানকে নিয়ে জাপানে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবারও উচ্চ আদালতে আপিল করেন মা এরিকো।
গত ২৯ জানুয়ারি পারিবারিক আদালত দুই শিশু মায়ের কাছে থাকবে বলে রায় দেন। পারিবারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ইমরান শরীফ।
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানে এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান ইমরান শরীফ জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। ১২ বছরের সংসারে তাদের ঘরে আসে তিন কন্যাসন্তান। তবে স্ত্রীকে ডিভোর্সের চিঠি দেয়ার পর সন্তানদের কাস্টডি নিয়ে জাপানের পারিবারিক আদালতে শুরু হয় মামলা।
জাপানের পারিবারিক আদালতে স্ত্রীর কাছে সন্তানদের হেফাজত হারায় বাবা ইমরান শরীফ। ২০২১ সালে গোপনে দুই মেয়ে জেসমিন মালিকা (১২) ও নাকানো লায়লাকে (১১) নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন ইমরান শরীফ। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যায়।
বিষয়টি জানতে পেরে গত বছরের ৭ জুলাই ঢাকায় আসেন এরিকো। পরে সন্তানদের ঠিকানা খুঁজে বের করেন। তবে সন্তানদের জন্য বাংলাদেশে আসার পরপরই শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে না দেয়া, লোক দিয়ে হয়রানি করা হলে আদালতের দ্বারস্থ হন মা এরিকো।