দুই দশক পর আবার আইন পেশায় ফিরলেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী। ২০ বছর পর তিনি আইনজীবী হিসেবে আপিল বিভাগে মামলা শুনানি করেছেন।
এক রিট মামলায় গতকাল রোববার (১৬ জুলাই) সিনিয়র হিসেবে শুনানি করেছেন তিনি। তাকে সহযোগিতা করেছেন দুই ছেলে মাহদীন চৌধুরী ও রাহেমীন চৌধুরী। এসময় তৈরি হয় এক আবেগঘন মুহূর্তের।
বাবা বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী। ২০ বছর উচ্চ আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২২ সালের জুলাই মাসে তিনি অবসরে যান।
তার দুই ছেলে ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী ও রাহেমীন চৌধুরী সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত আইনজীবী। এই জুলাই মাসে অবসরের এক বছর পূর্ণ হওয়ায় বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী আবারও আইনপেশায় ফিরে এসেছেন।
দুই ছেলের কাছে গতকালের দিনটি ছিল স্মরণীয়। সেই আবেগঘন মুহূর্ত নিয়ে বড় ছেলে ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী ফেসবুকে একটি পোস্টও দিয়েছেন। তার ভাষায়-
২০ বছর পরে আমার বাবা আজকে আইনজীবী হিসেবে আপিল বিভাগে (২ নং কোর্ট) মামলা করলেন। আমরা দুই ভাই সাথে ছিলাম, বাবার সাবমিশন্স পিছনে বসে শুনলাম…অদ্ভুত এক আবেগ কাজ করছিলো, ভাষায় প্রকাশ করা একটু কঠিনই…
৩ জেনারেশন ধরে- দাদা (এবং উনার আপন ছোটো ভাই) – বাবা- আমরা দুই ভাই সততার সাথে আইন পেশায় আছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে চাওয়া আমার বাবাকে যেন সুস্থভাবে দীর্ঘদিন আমাদের মাথার উপর ছায়া করে রাখেন!
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী এখন থেকে আপিল বিভাগে নিয়মিত আইন পেশা পরিচালনা করবেন।
বার কাউন্সিলের আইন অনুযায়ী, হাইকোর্টের বিচারপতি থেকে অবসরের পর তারা শুধুমাত্র আপিল বিভাগে আইনপেশা পরিচালনা করতে পারেন।
মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
মোঃ মিফতাহ উদ্দীন চৌধুরী ১৯৫৫ সালের ২৬ জুলাই এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোঃ আব্দুল আহাদ চৌধুরী, মাতা রিজিয়া বেগম চৌধুরী।
মিফতাহ উদ্দীন আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর ১৯৮১ সালে বার কাউন্সিলের সনদ লাভের পর অধস্তন আদালতে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন। তিন বছর পর ১৯৮৪ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন এবং হাইকোর্ট বিভাগে প্র্যাকটিস শুরু করেন। এরপর ২০০১ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
২০০৩ সালে তিনি অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। দুই বছর সাফল্যের সাথে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার পর ২০০৫ সালে একই বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে উচ্চ আদালতে বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই সময়ের মধ্যে বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় প্রদান করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি রায় হচ্ছে- শুধু বসতভিটাই নয়, হিন্দু বিধবা নারীরা স্বামীর সব সম্পত্তিতে ভাগ পাবেন।
গত বছর ২৫ জুলাই দীর্ঘ ১৮ বছরের বিচারিক জীবনের ইতি টানেন বিচারপতি মোঃ মিফতাহ উদ্দীন চৌধুরী। এদিন তাঁর বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় অবসরে যান তিনি।
বিচারক হিসেবে বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিনের শেষ কর্মদিবসে সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে চা চক্রের আয়োজন করা হয়। এসময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও অন্যান্য বিচারপতিগণ তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা জানান।