অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে আইন পেশায় নারী সম্পর্কে একটি ধারণা প্রচলিত ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্টের বিচার বিভাগ পুরুষ ও নারীর কর্মক্ষেত্র এবং অভিলক্ষ্যের মধ্যে একটা পার্থক্যের সিভিল আইন বরাবর স্বীকৃতি দিয়ে আসছে।
বিষয়টি এমন যে, পুরুষ হবে নারীর অভিভাবক, রক্ষক ও সমর্থক এবং বহু কর্মকান্ডে নারীকে শোভা পায়না। তাঁদের মতামত ছিল নারীর অধিক্ষেত্র ও কর্মকান্ড হবে গৃহের অভ্যন্তরে, স্বামী ছাড়া তাদের কোনো স্বতন্ত্র আইনী অস্তিত্ব নাই। স্বামী হবে তার কর্তা ও প্রতিনিধি।
অতীতে আইন পেশায় নারী বৈষম্য
১৮৬৯ সালে শিকাগোর এক আইনজীবীর সহধর্মিণী মাইরা কলবি ব্র্যাডওয়েল আইন পরীক্ষা পাস করার পর ইলিনোয়া বার সমিতির সনদের জন্য দরখাস্ত করেন। মিসেস ব্র্যাডওয়েলের দরখাস্ত নাকচ হয়ে গেলে তিনি শেষে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হন। ব্র্যাডওয়েল বনাম ইলিনোয়া (১৮৭৩) মামলায় মিসেস ব্র্যাডওয়েল হেরে যান। অবশ্য পরবর্তীতে ইলোনিয়া আইন পরিষদ আইন পেশায় নারী- পুরুষের বৈষম্য উঠিয়ে দেন এবং তাঁকে সনদ দেন ১৮৯০ সালে।
আনুমানিক সাত-আট দশক আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী মিস বেব্ সলিসিটর হওয়ার জন্য আবেদন করে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে ১৯২১ সালে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণ আইন পাশ হওয়ার পর ইংল্যান্ডের মহিলারা আইন পেশার অধিকার লাভ করেন।
বৃটিশ ভারতেও মহিলাদের জন্য আইন পেশার দ্বার রুদ্ধ ছিল। ১৯২১ সালের ২৪ সে আগস্ট এলাহাবাদ হাইকোর্ট কিছুটা হলেও সেই রুদ্ধদ্বার উন্মুক্ত করে দেন। অবশ্য এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় অন্যান্য হাইকোর্ট মানতে বাধ্য ছিলেন না। পরবর্তীতে ১৯২৩ সালে সংশয় দূর করার জন্য আইনজীবী (মহিলা) আইন পাশ করে আইন পেশায় মহিলাদের অধিকার দেয়া হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর, হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র নারী অ্যাডভোকেট ছিলেন। এখন আইন পেশায় নারীদের অংশগ্রহণের সংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে কোন নারী বিচারকও ছিলেন না। বর্তমানে বিচার বিভাগের এই বৈষম্যও অনেকটাই দূর হয়েছে।
সার্বিক বিশ্লেষণ থেকে এই বিষয়টি পরিষ্কার নারী বৈষম্য দূরীকরণের কনভেনশন অনুমোদন করার ব্যাপারে, পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন আইন পরিষদের বিভিন্ন মত ও বিভিন্ন গড়িমসি দৃশ্যমান ছিল।
মন্তব্য
যাই হোক পরিশেষে বলা যায়, যদিও আমাদের দেশের প্রতিটি সেক্টরে কমবেশি নারী-পুরুষ বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে তথাপি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে এই নারী-পুরুষ বৈষম্য যথেষ্ট দূরীভূত হয়েছে। আমরা নারীরা আশা রাখতে পারি যে ভবিষ্যতে এই নারী-পুরুষ বৈষম্য সম্পূর্ণ দূরীভূত হবে।
বর্তমান সরকার যেকোনো বৈষম্য দূরীকরণে যথেষ্ট সোচ্চার। এরই সূত্র ধরে নারী-পুরুষ বৈষম্যের ক্ষেত্রে আমরা নারীরা আরও আশা রাখতে পারি, বাংলাদেশ সংবিধানের ২৮এর (১ও২) দফা অনুযায়ী রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
লেখক: অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর, জজ কোর্ট, খুলনা।