সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত প্রাঙ্গণে সমাবেশ ও মিছিল না করার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় কঠোরভাবে অনুসরণ করতে আপিল বিভাগের লিখিত আদেশ প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে- আদালত অবমাননার আবেদনকারী, অবমাননাকারী উত্তরদাতা এবং অন্য সবাইকে নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে যে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০০৫ সালের ২৩ মে প্রদত্ত সুয়োমোটো অর্ডারে নির্দেশিত এবং ১৫ বিএলটি (এইচসিডি) ৬৬ প্রকাশিত আদেশ অনুসরণ করবে এবং উদ্ধৃত মামলার আদেশ ও নির্দেশাবলী কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
গত ৩০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বিএনপি সমর্থিত সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা আবেদনের শুনানির দিন ঠিক করে এ আদেশ দেন।
আদেশে আগামী ১৯ অক্টোবর আদালত অবমাননার আবেদনের পর শুনানির দিন ঠিক করা হয়। ওই সাতজন আইনজীবী এরইমধ্যে এই আদেশের কপি পেয়েছেন।
এর আগে বিএনপি সমর্থিত সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথী।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, অবমাননার আবেদনের ওপর অবকাশের পর শুনানি হবে। পরে আদালত ১৯ অক্টোবর শুনানির দিন রেখে আদেশ দেন। একই সাথে হাইকোর্টের (১৫ বিএলটি) স্বতঃপ্রণোদিত রায়ের নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ওইদিন বলেছিলেন, হাইকোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত রায়ের নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করতে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
২০০৫ সালের ওই নির্দেশনায় ছিল, ‘আদালত প্রাঙ্গণে মাইক ব্যবহার করা যাবে না, মিছিল-মিটিং করা যাবে না। এই আদেশ অমান্য করে কোনো কাজ করলে আদালত অবমাননা হবে। অবমাননার বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের আদালতের কার্যক্রম থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিরত থাকবেন।’
রায়ের সারাংশ অনুসারে আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ঘেরাও, পিকেটিং, সমাবেশ অথবা এমন কোনো কাজ, যা বিচারকাজে বাধা প্রদান করে, তা করতে পারবে না। আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের মিছিল-মিটিং করতে পারবে না। এ ছাড়া যারা আদালত অবমাননা করবে, তারা বাংলাদেশের কোনো আদালতে আইনজীবী হিসাবে দাঁড়াতে পারবে না।
যে সাতজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন- বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাটর্নি জেনারেল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহসম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
এর আগে ২৯ আগস্ট আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ করায় বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।
গত ১৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির আইন সম্পাদক ও ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘গত ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত এক শোক সভায় প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচারপতির বক্তব্য বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং ১৬ আগস্ট জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সংবাদ সম্মেলন।
তিনি বলেন, আলোচনা সভায় বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ হিসেবে বিচারপতিদেরকে চিহ্নিত করেছেন। তিনি স্পষ্টতই দেশের চলমান রাজনৈতিক বিষয়ে শাসক দলের নেতাদের মতো রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, ইদানীং সুষ্ঠু নির্বাচন, বিদেশী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এসব নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে, শুধু ভোট দেয়াই একমাত্র গণতন্ত্র নয়।