জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যেন কারো ভূমি অফিসে না যেতে হয়: ভূমিমন্ত্রী
‘ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এবং বাংলাদেশে টেকসই নগরায়ন’ শীর্ষক সেমিনারে ভূমিমন্ত্রী

জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যেন কারো ভূমি অফিসে না যেতে হয়: ভূমিমন্ত্রী

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আমরা চাই ঘরে বসেই মানুষ যেন ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারে। একান্ত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যেন কারো ভূমি অফিসে না যেতে হয়। যত ‘হিউম্যান টু হিউম্যান কানেকশন’ কম হবে, সেবা গ্রহণ তত ভালো হবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (ডিসিসিআই) উদ্যোগে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে অবস্থিত ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এবং বাংলাদেশে টেকসই নগরায়ন’ শীর্ষক সেমিনারে ভূমিমন্ত্রী এই কথা বলেন।

একইসঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’ সহ মোট তিনটি ভূমি বিষয়ক আইনের খসড়া আগামী সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিল আকারে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা সম্ভব হবে। অপর দুটি আইনের খসড়া হচ্ছে ‘ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩’ এবং ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন, ২০২৩’।

প্রসঙ্গত, আজ রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) তারিখ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

ভূমিমন্ত্রী এসময় আরও আশা প্রকাশ করেন, প্রযোজ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর আগামী অক্টোবরের মধ্যেই ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনসহ তিনটি বিলই আইন হিসেবে সংসদে পাস করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি শুরু হওয়া বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে সম্পন্ন হলে আগের জরিপের অনেক সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে। ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার ফলে সীমা বহির্ভূত অতিরিক্ত জমির মালিক হওয়ার সুযোগ এখন আর নেই।

অনুষ্ঠানে আলোচকরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, পরিবেশ সংরক্ষণ, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি জমি সুরক্ষা, সারাদেশে সুবিন্যাস্ত নগরায়ন, রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ কমানোর কৌশল ও ক্ষেত্র সমূহ নিয়ে আলোচনা করেন।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াসিম উদ্দিন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও স্থপতি ইকবাল হাবিব সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেমিনারটি সভাপতিত্ব করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার।

সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত স্থাপত্য অধিদফতরের সাবেক প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, রিহ্যাবের সহসভাপতি প্রকৌশলী মুহাম্মদ সোহেল রানা, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন এবং নতুনধরা এসেটস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদী উজ জামান।

বিল আকারে সংসদে উত্থাপন হতে যাওয়া উল্লিখিত তিনটি ভূমি বিষয়ক খসড়া আইন হলো-

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩-এ ভূমি সম্পর্কিত বেশকিছু অপরাধকে চিহ্নিত করে তা ফৌজদারী অপরাধের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সেসব অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে এই আইনে। এতে নাগরিকেরা নিজ-নিজ মালিকানাধীন ভূমির নিরবচ্ছিন্ন ভোগ-দখলের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারবেন। এই আইনে ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং একইসাথে প্রতিরোধ, দমন ও প্রয়োজনে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা ও কারাদন্ডণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা আছে।

ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ব্যক্তি ক্ষেত্রে কৃষি জমি মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা ৬০ বিঘার বিধান। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনটিকে শিথিল করা হয়েছে। সমবায় সমিতির মাধ্যমে চা, কফি ও রাবার বাগান, শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম, রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনটি শিথিল থাকবে। এই আইনে বাস্তুভিটার অধিকার, বর্গাচুক্তি ও উৎপন্ন ফসলের ন্যায্য ভাগের কথাও বলা হয়েছে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন, ২০২৩ -এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কোনও ফসলি জমি থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ করার বিধান। এ ছাড়া নদীর নাব্য নষ্ট হতে পারে এমন স্থান থেকেও বালু উত্তোলন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের যন্ত্র জব্দ করা যাবে। বালু পরিবহনে রাস্তার কোনো ক্ষতি হলে ইজারাদার কর্তৃপক্ষকে রাস্তা আবার মেরামত করে দিতে হবে এই আইনের আওতায়।