হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ থেকে মেলেনি জামিন। ২০ দিনের মাথায় জামিন পেয়েছেন অবকাশকালীন বেঞ্চ থেকে। যেদিন জামিন মিলেছে সেদিনই জামিন আদেশ অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছেছে কুমিল্লার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। জামিন আদেশ পৌঁছানোর পরই দাখিল করা হয়েছে জামিননামা।
জামিননামায় স্বাক্ষরের পর তা পৌঁছে কুমিল্লা কারাগারে। এরপরই বিকালে মুক্তি পান যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. শাহীনুল ইসলাম ওরফে সোহেল সিকদার। এজাহারভুক্ত আসামির মুক্তিতে ভীত সন্তস্ত্র হয়ে পড়েছেন মামলার বাদী।
এদিকে হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আবেদনে মুক্তি পাওয়া আসামিকে গ্রেপ্তারে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এই আবেদনের উপর শুনানি হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, ২০ দিনের মধ্যে তিনটি বেঞ্চে জামিনের চেষ্টা। এরমধ্যে দুটি বেঞ্চ জামিন দেয়নি। তবে অবকাশকালীন বেঞ্চ থেকে জামিন হাসিল করেছে আসামির আইনজীবী।
তিনি বলেন, যে চতুরতার আশ্রয় নিয়ে জামিন আদেশ হাসিল করা হয়েছে তাতেই আমাদের আপত্তি। এছাড়া যে অস্বাভাবিক দ্রুততায় হাইকোর্টের জামিন আদেশ কারাগারে পৌঁছানো হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে প্রতিটি জায়গায় লোক প্রস্তুত করা ছিলো। যার কারণে জামিন হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আসামি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে গেল।
চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে দাউদকান্দির গৌরীপুর পশ্চিম বাজার ঈদগাহ এলাকার মসজিদ গলিতে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে (৪০) গুলি করে হত্যা করে বোরকা পরিহিত দুর্বৃত্তরা।
এ হত্যাকাণ্ডের দুইদিন পর ২ মে দিবাগত মধ্যরাতে নয়জনের নাম উল্লেখ করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী পপি আক্তার। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে সোহেল অন্যতম। যিনি তিতাস উপজেলার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। গত ৬ মে তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
দুটি বেঞ্চে জামিন আবেদন
নিম্ন আদালতে জামিন না মঞ্জুরের পর হাইকোর্টে জামিন চান এই আসামি। গত ২৭ জুলাই বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে।
এরপর ৩ ও ১০ আগস্ট আবেদনটি কার্যতালিকায় ছিলো। ১০ আগস্ট জামিন জামিন আবেদনটি খারিজের আদেশ দিতে চাইলে আসামি আইনজীবী তা ‘নন প্রসিকিউশন’ করে নেন।
এরপর ২৮ আগস্ট বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে আসামির জামিন চেয়ে পুনরায় আবেদন করেন। এরপর আবেদনটি শুনানির জন্য টানা তিন কার্যদিবস কার্যতালিকায় আসে।
৩১ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ইতিপূর্বে জ্যেষ্ঠ হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এরপর এখানে পুনরায় জামিন চেয়েছে। তখন জামিন আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে ডিলিট করে দেয় ওই বেঞ্চ।
দুই দিনের মধ্যে দুটি বেঞ্চ থেকে জামিন না মেলায় অবকাশকালীন বেঞ্চে জামিন আবেদনটি নিয়ে যান আসামির আইনজীবী। অবকাশের প্রথম দিন বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চের আনলিস্টেড মোশন হিসাবে জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য ছিলো।
গত রবিবার শুনানি নিয়ে আসামি সোহেল সিকদারকে জামিন দেয় হাইকোর্ট। ওই জামিনের বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
আদালত আদেশে বলেছেন, মামলার সকল বিষয়াদি বিবেচনা করে আমরা আসামিকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিতে সম্মত হয়েছি। অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের পাশাপাশি চার সপ্তাহের রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
এই জামিন আদেশ দুই বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ওইদিনই তা কুমিল্লার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৌঁছে যায়। সেখানে জামিননামা দাখিল ও স্বাক্ষরের পর যায় কারাগারে। এরপরই বিকালে মুক্তি পায় হত্যা মামলার এই আসামি।