বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর আদালত। চুক্তিভঙ্গ এবং প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় এ পরোয়ানা জারি হয়েছে।
বহরমপুর আদালতের মূখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক অলকেশ দাস বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এ মামলায় এর আগে তিনবার মমতাজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আনন্দবাজার। তার পর মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেন মমতাজ। তবে উচ্চ আদালত তার সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।
বহরমপুর আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর সশরীরে আদালতে হাজিরা দিতে হবে মমতাজকে।
এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গে মমতাজের আইনজীবী দেবাংশু সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, তার মক্কেল আদালতকে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ৯ অগস্ট মুর্শিদাবাদের মূখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল মমতাজের। ৮ অগস্ট বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মমতাজের মামলার চার্জ গঠন হবে। সেদিন তিনি উপস্থিত না হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবে।
এরপরই মমতাজ বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে আদালতে একটি আবেদনপত্র দাখিল করে জানান, ওই সময়ে তিনি কানাডায় একটি অনুষ্ঠানে থাকবেন। ফলে তার পক্ষে আদালতে হাজিরা দেয়া সম্ভব হবে না। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) মুর্শিদাবাদের মূখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ওই আবেদন খারিজ করে দিয়ে মমতাজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
আদালত সূত্র জানায়, মুর্শিদাবাদে ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য আয়োজক সংস্থার মালিক শক্তিশঙ্কর বাগচীর সঙ্গে মমতাজের লিখিত চুক্তি হয়। সেই চুক্তি মোতাবেক শক্তিশঙ্করের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মমতাজ নিয়মিত অংশ নিতেন।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ১৪ লাখ টাকায় মুর্শিদাবাদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা ছিল দেশবরেণ্য এ সংগীত শিল্পীর। এ উপলক্ষে তিনি অগ্রিম টাকাও নেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত চুক্তি অমান্য করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি মমতাজ।
এরপরই শক্তিশঙ্কর চুক্তিভঙ্গ ও প্রতারণার অভিযোগ তুলে মুর্শিদাবাদের মূখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মমতাজের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার ভিত্তিতে আদালত পরবর্তীতে সমন জারি করে।
অভিযোগ রয়েছে, মমতাজ আদালতের নির্দেশ এড়িয়ে যান। পরে এ মামলা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু সেখানে ‘রক্ষাকবচ’ পাননি মমতাজ।
এর আগেও তামিলনাড়ুর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে মমতাজের বিরুদ্ধে। সেই মামলা এখনও তামিলনাড়ুর আদালতে বিচারাধীন।
মামলার ব্যাপারে শক্তিশঙ্কর বলেন, ‘২০০৮ সাল থেকে এই মামলা চলছে। আমিও এই মামলার শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব। মামলাটির জন্য আজ আমি নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। সেদিন ১৪ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে তিনি (মমতাজ) অনুষ্ঠান না করায় আমি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আমি ন্যায়বিচার চাই। আমার দেয়া অগ্রিম অর্থ সুদসহ, মামলার সব খরচ এবং আমার ১৫ বছরের হয়রানির ক্ষতিপূরণের টাকা চাই।’
মমতাজের আইনজীবী দেবাংশু সেনগুপ্ত বলেন, ‘মক্কেলের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা হয়নি। তবে আমার সঙ্গে এখন পর্যন্ত যা কথা হয়েছে, উনি আদালতকে সহযোগিতা করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আশা করছি, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর উনি আদালতে হাজিরা দেবেন।’