সাব্বির এ মুকীম:
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের সন্নিকটে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি (বাইউস্ট) এর আইন বিভাগের ৪ বছরের এলএল. বি. ডিগ্রি দেয়া হয়। সেজন্য জন্য শেষ সিমিস্টারে মক ট্রায়াল এন্ড ট্রায়াল এডভোকেসি নামে ৩ ক্রেডিটের বাধ্যতামূলক কোর্স রয়েছে। বাইউস্ট কতৃপক্ষের বদান্যতায় ওনাদের ল ফার্স্ট ব্যাচ ও সেকেন্ড ব্যাচ ২টাতেই আমার সুযোগ হয়েছে এই কোর্স শিক্ষার্থীদের সাথে থেকে থেকে জ্ঞান, তত্ত্ব ও তথ্য আদান প্রদান করার, শানিত করার। সুযোগ হয়েছে নিজের অনেক ভুল সোধন করার আর অনেক অজানা , জানা- যা আগেই জানা উচিৎ ছিলো। বাইউস্ট কতৃপক্ষ এবং বাইউস্ট ল ডিপার্টমেন্ট কে কৃতজ্ঞতা।
এই কোর্স পুরোপুরি আসার অপরিচিত। প্রথম যখন কোর্সটি বরাদ্দ করে- যুগপৎ আনন্দিত ও উদ্বিগ্ন হই। প্র্যাকটিক্যাল কোর্স তাই আনন্দিত; কিন্তু কোর্স এর স্ট্রাকচার কি রকম হবে, কিভাবে পড়াবো তা তো জানিনা। সন্দেহের দোলাচালে পড়ে যাই।
কাকতালীয়ভাবে ঠিক সেইসময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাননীয় চেয়ারম্যান এবিএম মাসুম স্যার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ধরনের মানে মক ট্রায়াল এন্ড ট্রায়াল এডভোকেসি কোর্স এর পরীক্ষায় বহিঃপর্যবেক্ষক হিসেবে দাওয়াত দেন। লুফে নিলাম। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যবেক্ষণ কাজে গেলাম হলফ করে বলতে পারি আমি যে প্রতিষ্ঠান থেকে ল ডিগ্রী নিয়েছি সেখানে ৫ বছর শিক্ষক মহোদয়দের কাছ থেকে যতটুকু হাতে কলমে কাজ শেখার পথ পেয়েছি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ওই ১দিনে তার চেয়ে হাজার গুন বেশী কলমে কাজ শেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। ১টা মিনিমাম পরিমান হাতে কলমে কাজ শেখানোর অনিবার্য দায় পালনে ব্যর্থতার জন্য সৃষ্টিকর্তা আমার পরম পূজনীয় শিক্ষকদের ক্ষমা করুন, আমিন। উল্লেখ্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সরকার পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় আর বাইউস্ট সামারিক বাহিনীর পরিচালিত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সেদিন ছাত্রছাত্রীরা ৪টা মামলা প্রদর্শন করে ছিল- ২টা সিভিল মামলা আর ২টা ক্রিমিনাল মামলা। ক্রিমিনাল মামলাতে আসামিপক্ষে ৩৪২ ধারায় পরীক্ষার স্তর যখন আসে ২ মামলাতেই দেখলাম ২ বিজ্ঞ বিচারক সংক্ষেপে অভিযোগ, চার্জ বিবরণ এবং প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষীদের প্রদত্ত জবানবন্দি জেরা সব কিছুর সারসংক্ষেপ আসামিকে পড়ে শোনালেন। নির্দ্বিধায় কনফেস করছি যে, ২০০৯ সালে সনদ পাইছি কিন্তু ২০২৩ সাল এর আগ পর্যন্ত জানতাম না ৩৪২ ধারা স্তর মানে কেবল আসামিকে উঠিয়ে আমি নির্দোষ সাফাই সাক্ষী দিব না বলানো নয়। বরং আইন মোতাবেক আরো বিস্তারিত কিছু বলা, করা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি কৃতজ্ঞতা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাতে কলমে শিখে নিয়ে এমনকি কিছু সময় ভিডিও করে সেই ভিডিও বারবার দেখে বাইউস্ট এ মক ট্রায়াল এন্ড ট্রায়াল এডভোকেসি কোর্স বাইউস্ট আইন বিভাগের প্রথম ব্যাচ আর দ্বিতীয় ব্যাচেলর জন্য পরিচালনা করি।
এই আলাপ ২য় ব্যাচের কোর্সের অভিজ্ঞতা মাত্র। কোর্সের অনিবার্য অংশহিসেবে শিক্ষার্থীদের ১দিন পুরো আদালত চলাকালীন সময় ছাত্রদের পর্যবেক্ষণ করা বাধ্যতামূলক । সে কারণে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মৌখিকভাবে বিজ্ঞ আদালতে অনুমতি প্রার্থনা করি পরের দিন মানে ২৮ আগস্ট সোমবার এর জন্য অনুমতি দেন। সেদিন ঠিক সকাল দশটার সময় নাঙ্গলকোট এজলাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রবেশ করি। তার আগের দিন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পই পই করে হাইকোর্ট রুলস ১৯৭৩ এর ১৬এ অধ্যায়ের ১নং রুল ও ২নং রুল অক্ষরে অক্ষরে পড়ায়ে আনছি। কোর্স শুরুই করি হাইকোর্ট রুলস ১৯৭৩ এর ১৬এ অধ্যায়ের ১নং রুল ও ২নং রুল এর উপর ২টা ক্লাস নিয়ে। তাই এজলাসে ঢোকার আগে এবং তা আবার তাদেরকে স্মরণ করায় দেই। ডিভাইস কোড, ড্রেস কোড, ফেসিয়াল কোড, সু কোড যতোটা সম্ভব সর্বোচ্চ নিশ্চিত করি।
আমরা সদলবলে আদালতে প্রবেশ করার পর আদালতের বেঞ্চ সহকারী সাহেব আদালতের বেঞ্চ সহকারী উঠে এসে পেছনে বসার চেয়ার খালি করে ওনারা মেহমান, মেহমানদের বসতে জায়গা দেন। শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে পেছনের সারিতে বসে পড়ে। যথাসময়ে এজলাসে বিজ্ঞ আদালত প্রবেশ করেন। বিচার কার্যক্রম চলতে থাকে, এক সময় শেষ হয়। বিজ্ঞ বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন। এজলাস ত্যাগ করার সময় একটু থেমে বিজ্ঞ বিচারক হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করেন- ”আপনারা কতজন এসেছেন?” আমি সংখ্যাটা বলি। তখন বিজ্ঞ বিচারক বললেন যে- ”আমি কোর্ট থেকে নামছি, তবে আপনার একটু বসেন।”
আমি একটু দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম আমার ছাত্ররা কোন ভজঘট পাকালো কিনা? ওদের কত হাইকোর্ট রুলস ১৯৭৩ এর ১৬এ অধ্যায়ের ১নং রুল ও ২নং রুল নিশ্চিত করেছি তবুও কিভাবে বরখেলাপ হলো? তাছাড়া আমার শিক্ষার্থীরা প্রায় সবাই খুব লক্ষী বাচ্চা, আমার আদরের মানুষ- ওরা এমন কিছু করবে এটা আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না কিছুক্ষণ পর খাস কামরা থেকে আমাকে বিজ্ঞ বিচারক ডেকে পাঠান। খাসকামরায় অনুমতি নিয়ে ঢুকে সালাম দিয়ে পড়ে খুব উদ্বিগ্ন স্বরে বললাম “স্যার, কোন ত্রুটি হয়েছে কি?” মিষ্টি একটা নরম হাসি হেসে বিচারক মহোদয়া বললেন ”না, আমি আপনার এই কোর্স সম্বন্ধে জানতে চাই। এরপর যেটা বললেন বা যোগ করলেন সেটাই এই লেখা, সেটাই এই আলাপের বিষয়- সে বিষয়ে পরে আসছি।
হাঁফ ছেড়ে বাঁচার আনন্দে আমি গড়গড় করে বলতে শুরু করলাম এই কোর্সের নাম মক ট্রায়াল এন্ড ট্রায়াল এডভোকেসি কোর্স। ১০০ নম্বরের এই কোর্স এ ৫০ নম্বর থাকে ব্যবহারিক পরীক্ষার ভিত্তিতে। শিক্ষার্থীরা আদালতে কিভাবে আসবে, কিভাবে এজলাসে ঢুকতে হবে, জজ সাহেব, বেঞ্চ অফিসারদের সাথে, অন্য উকিলদের সাথে, মুহুরীদের সাথে, জেরা জবানবন্দীতে স্বাক্ষীর সাথে কিভাবে আচার আচরণ করতে হবে। অর্থাৎ যার সাথেই হোক বচনের, বাচনের ও প্রকাশ ভঙ্গির সীমা কতটুকু, কিভাবে মামলা দায়ের করা হয় থেকে শুরু করে রায় পর্যন্ত বিচারক আইনজীবী মক্কেল আদালতের অন্যান্য কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড দেখানো হয়। সব ধরনের ফরম এবং ফরমেট চেনানোর চেষ্টা করা হয়।
প্রথমে ক্লাসে মুখে প্রভাষনের মাধ্যমে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়- এরপর ক্লাসের মধ্যেই ক্লাসরুমের চেয়ার টেবিল দিয়ে একপাশে এজলাস আর একপাশে সেরেস্তা সাজিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই একটা পূর্ণাঙ্গ ছদ্ম আদালত ব্যবস্থা উপস্থাপন করে। কয়েকদিন এমন উপস্থাপনের পর শিক্ষার্থীদের আদালতে এনে প্রকৃত আদালত চিত্র দেখানো হয়। আগে থেকে নিজেদের কল্পনার ধারণা থাকায় খুব সহজে তারা আদালতের কার্যক্রম অনুধাবন করতে পারে এরপর আবার ফিরে গিয়ে ছদ্ম আদালত ব্যবস্থা পারফর্ম করার হয়। এবার তার সাথে যোগ হয় আদালত ঘুরে শিখে আসা হাতের কলমের অভিজ্ঞতা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পারফরমেন্সে গুণগত পরিবর্তন আসে।
বিজ্ঞ বিচারক মহোদয়া এজলাসের যেভাবে প্রবেশ করেন এবং যে এই ভঙ্গিমায় সম্ভাষণ করেছিলেন এবং যে ভঙ্গিমায় এজলাস ত্যাগ করেছিলেন- ক্লাসের পারফরম্যান্সে দেখি ১ মেয়ে শিক্ষার্থীদের একজন জজ চরিত্র পারফর্ম করতে গিয়ে পুরো সেই বিচারক মহোদয়ার হাটার স্টাইল, সম্ভাষণের স্টাইল অনুকরণ করার চেষ্টা করে। দেখে মনে মনে হাসি পায়নি বরং হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জেগেছিলো,কারণ কারণ আমার আইন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাকে এই সুযোগটুকু দেয়নি। বিস্তারিত বিবরণ শুনে বিচারক মহোদয়া প্রচন্ড খুশি হলেন উনার প্রথম প্রতিক্রিয়াই ছিলো যে ওনার আইন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাঁকে এই সুযোগটুকু দেয়নি; এই বাচ্চাগুলো পেয়েছে তাতে তার বেশ আনন্দ হচ্ছে। তিনি তার প্রথম আদালত-পর্যবেক্ষণ এর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক সিনিয়র জেলা জজ তানজিনা ইসমাইলের কথা স্মরণ করলেন। বললেন তানজিনা ইসমাইল স্যারের আদালতে কেউ একজন ওনাদের কয়জন কে অনানুষ্ঠানিকভাবে নিয়ে গিয়েছিলেন।
উচ্ছাস প্রকাশ করে বললেন এই কোর্সটা এলএল.বি. ডিগ্রির জন্য সবখানে চালু করা দরকার। তখন তাঁকে বাংলাদেশের একেবারে নতুন ১টা পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ে আইন বিভাগের সিলেবাস প্রণয়ন করতে গিয়ে বিভাগের জুনিয়র শিক্ষকরা এই কোর্স অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে বিশেষজ্ঞ হিসেবে আস বাংলাদেশের আইন এর সিনিয়র অধ্যাপকদের কতৃক জুনিয়রদের হেনস্তা হওয়ার তথ্য দিলাম। সিলেবাসে মক ট্রায়াল এন্ড ট্রায়াল এডভোকেসি কোর্স প্রস্তাব করায় জুনিয়র শিক্ষক কে কিভাবে নাজেহাল করেছিল তা বর্ণনা করে ক্ষোভের আতিশয্যে আমি বলে বসলাম- ”আমার শিক্ষকেরা আমাকে ঠকিয়েছেন”। বিজ্ঞ বিচারক বিচারিক আচরণবিধির কারনে আমার এই মানবিক ক্ষোভের কোনো প্রতি উত্তর করেননি। কিন্তু যেভাবে মাথা নাড়লেন তাতে অনুভব হল সম্ভবত এই ক্ষোভ আমার চেয়ে কোনো অংশেই তার খুব কম নয়।
ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি এলএল. বি. ডিগ্রি দেয় এমন সবখানেই এমন কোর্স চালু অত্যাবশ্যক। বরং তার সাথে আরও কিছু ব্যবস্থা দরকার আছে। প্রায়োগিক কোর্সে এই স্টাইলে ১০০ এর মধ্যে ১০ নম্বরের ব্যবহারিক অংশ বাধ্যতামূলক করা যায়। উদাহরণ স্বরুপ পেনাল কোড এর ছাত্র-ছাত্রীরা ৯০ নম্বরের জন্য লিখিত পরীক্ষা দিবে আর ১০ নম্বরের জন্য পেনাল কোড ভিত্তিক কোন মামলার সার্বিক পারফর্ম করে দেখাবে। এভাবে প্রতিটি আইনে ব্যবহারিক অংশ যোগ করলে, পেশাগত জীবনে প্রবেশ করে অথৈ সমুদে তলিয়ে যাওয়া অনুভূতি হবে না। এলএল.বি. ডিগ্রি অর্জনের সময় প্রায়োগিক শিক্ষার বা ট্রেনিং এর আবশ্যকতা এডভোকেটশিপ এর পাশাপাশি জুডিশিয়ারির জন্য ও প্রাসঙ্গীক মর্মে বিজ্ঞ বিচারকমত প্রকাশ করেন।
যে ঘটনা কে কেন্দ্র করে এতো আলাপ লেখলাম, এবার সে বিষয়ে আসি। আমরা নাঙ্গলকোট আদালতের বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ এর আদালতে গিয়েছি আগেই বলেছি। এই আদালতে এই বিজ্ঞ বিচারক এর কর্মকালে আমার নিজের কোনো মামলা করা হয়নি। কেবল মাত্র লিগ্যাল এইডের ১টা মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল। ১টি মামলার অভিজ্ঞতাতে (১) বিজ্ঞ বিচারক এর আদালত পরিচালনার স্মার্টনেস অনুভব করা এবং (২) ঐএজলাস রুমে দাঁড়ানোর ও বসার পর্যাপ্ত স্পেস আছে এই ২ মাপকাঠিতে আমি আমার প্রথম ব্যাচের মতো দ্বিতীয় ব্যাচ এর জন্যও তাই উনার কোর্টকে ব্যবহারিক ক্লাসের আদালত হিসেবে বেছে নেই। বিজ্ঞ বিচারক এর সাথে আমার আগে কখনো পরিচয় ছিল না। ওনার সাথে আগে কখনো কোথাও দেখা হয়নি, পরিচয় হয়নি। সেদিনই মানে ২৮ আগস্ট প্রথম ওনার সাথে খাস কামরায় ওনার সাথে দেখা হলো।
তাই আমাকে খাসকামরায় ডাকার পর আমার করা উদ্বিগ্ন প্রশ্ন শুনে তিনি বললেন – “না তেমন কিছু হয়নি। এর আগেও একবার আপনি এসেছিলেন ছাত্রদের নিয়ে। সেদিন ব্যস্ততার কারণে কথা বলতে পারিনি। কিন্তু কথা বলার ইচ্ছে ছিল। আজকে সময় পেয়েছি তাই আজকে আপনাদের সাথে পরিচিত হতে চাচ্ছি। আর বাচ্চাদের একটু নাস্তা করাতে চাই। ওরা (সহকারী) নাস্তা আনতে গেছে। একটু অপেক্ষা করুন।”
শুনে আমি থ হয়ে গেলাম। বিজ্ঞ বিচারক তখনও জানেন না এই ছাত্র দের বিশ্ববিদ্যালয় পুরো নাম কি এটা কি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নাকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এটাকি আর্মি বিশ্ববিদ্যালয় নাকি না আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি। কোনো চেনাজানা ছাড়াই একজন বিচারক এতগুলো বাচ্চা এভাবে আদর করবেন আমি ভাবতেই পারিনি। বিজ্ঞ বিচারক কুমিল্লার বিখ্যাত মাইনুদ্দিন বেকারি হতে লোক পাঠিয়ে নাস্তা আনিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশন করতে বলেন।
টানা চার ঘন্টা পর্যবেক্ষণের পর নাস্তা পেয়ে হাতে যেন চাঁদ পেল ছাত্র-ছাত্রীরা। ওদের মধ্যে আইন পেশার প্রতি বিশেষ করে জুডিশিয়ারিতে চেষ্টা করার নতুন উদ্যম লক্ষ্য করলাস, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীত হিসেবে যে হীনমন্যতা কাজ করতো তা কিছুক্ষণের জন্য হলেও বিজ্ঞ বিচারক এর আদরে আড়াল হলো। ওরা অভিভূত। বিজ্ঞ বিচারককে খোদা অনেক সাহায্য করুন, নিরাপদে রাখুন। বিনা পরিচয় যেভাবে আমার শিক্ষার্থীদের এবং আমাকে আনন্দিত করলেন- সৃষ্টিকর্তা যেন সারাজীবন বিজ্ঞ বিচারক কে এর চেয়েও বেশি আনন্দে রাখেন এই প্রার্থনা করি।
খাস কামরা থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীদের বললাম তোমরা সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসে এক তোমরা সম্ভবত বাংলাদেশ একটা ইতিহাস দেখলা – যা আগে কোথাও আগে কোথাও আগে কখনোই ঘটেনি – এখানে যে রকমে কোনো রকমের পূর্ব পরিচয় ছাড়া শিক্ষার্থীরা নিজের গরজে নিজের প্রয়োজনে এসে – বিজ্ঞ বিচারক এর নিকট থেকে এমন মায়াভরা আদর স্নেহ পেল। জীবন যেমন নিষ্ঠুর পাষাণ, আবার জীবন আবার মায়া ভরা নরম চন্দ্রালোক ও বটে। সেদিনের বিজ্ঞ বিচারক অভিভূত করা আপ্যায়নে এ আপ্তবাক্যটি পুনরায় শিখলাম ।
সাব্বির এ মুকীম: এডভোকেট, কুমিল্লা জজ কোর্ট,