আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী আয়কর রিটার্ন স্বনির্ধারণী বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, অর্থাৎ এখন থেকে করদাতাকে তার নিজের আয় নিজে নিরূপণ করে প্রযোজ্য আয়কর পরিশোধ করতে হবে। যেখানে আগে স্বনির্ধারণী ও সাধারণ দুই ধরণের আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যেতো।
এছাড়া ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে, তবে এই তারিখের পরও রিটার্ন জমা দিতে পারবে আয়করদাতারা। সেক্ষেত্রে তাদের জরিমানা দিতে হবে।
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ রহিত করে যুগোপযোগী ও সময়োপযোগী করে নতুন আয়কর আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। যা ২০২৩ সালের ২৩ জুন গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নতুন আইনের বিষয়ে অংশীজনদের জানানোর জন্য গণশুনানি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কর অঞ্চল-২ এ কর কমিশনারের কার্যালয়ে নতুন আইনটি বিষয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
যেখানে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। নতুন আইনে কি কি পরিবর্তন হলো এবং আয়কর রিটার্ন দাখিলে নতুন করে কি কি সংযোজন ও বিয়োজন হবে তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন: বছরের যেকোনো সময় রিটার্ন দাখিল করা যাবে
আয়কর কর্মকর্তারা জানান, নতুন আইনে স্বনির্ধারনী রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেখানে পূর্বের নিয়মে নরমাল রিটার্ন দাখিল করা যেত। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে করদাতারা বিভিন্ন ধরনের কর রেয়াত পাবেন না এবং বিলম্ব মাশুল গুণতে হবে। এসব ক্ষেত্রে তার কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয় মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ধরা হবে এবং নিয়মিত হারে কর দিতে হবে।
আয়কর দাতার রিটার্ন প্রস্তুত সহজলভ্য করতে ফি নির্ধারণ করে এজেন্সিকে দায়িত্ব দেয়াসহ নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। নতুন আইন অনুযায়ী প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকেও রিটার্ন জমা দিতে হবে।
আয়কর কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানান, বার্ষিক করযোগ্য আয় পাঁচ লাখ টাকার কম হলেই এক পাতার আয়কর বিবরণী জমা দিলেই হবে। এ ছাড়া সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকার কম হতে হবে, এমন শর্তও রয়েছে।
তিনি বলেন, কম আয় ও সম্পদের এই করদাতাদের জন্য এক পাতার একটি ফরম প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কম আয়ের করদাতার রিটার্ন জমা সহজ করতেই এক পাতার রিটার্ন ফরম চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
নতুন আইনের আলোকে এই পাতা সাজানো হয়েছে। এক পাতার ওই ফরমে সব মিলিয়ে ১৬ ধরনের তথ্য দিতে হবে। এগুলো হলো নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন), সার্কেল, কর অঞ্চল, কর বর্ষ, আবাসিক মর্যাদা, মোবাইল নম্বরসহ যোগাযোগের ঠিকানা, আয়ের উৎস, মোট পরিসম্পদ, মোট আয়, আরোপযোগ্য কর, কর রেয়াত, প্রদেয় কর, উৎসে কাটা করের পরিমাণ (যদি থাকে), এই রিটার্নের সঙ্গে প্রদত্ত কর, জীবনযাপন ব্যয়।
আরও পড়ুন: কিছু পরিবর্তন এনে জাতীয় সংসদে ‘আয়কর বিল ২০২৩’ পাস
এক পাতার রিটার্ন ফরমের সুবিধা হলো এখানে কোন খাত থেকে কত কর আয় হয়েছে, এর বিস্তারিত লিখতে হবে না। শুধু মোট আয়ের তথ্য দিলেই হবে। এভাবে মোট সম্পদ, জীবনযাত্রার খরচ, করের পরিমাণ-এসবের মোট পরিমাণ লিখলেই হবে।
এক পাতায় রিটার্ন জমা দিতে হলে কিছু শর্তও দেয়া হয়েছে। যেমন কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হওয়া যাবে না এবং মোটরগাড়ি থাকবে না। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় গৃহসম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ থাকলেও এক পাতার ফরম প্রযোজ্য হবে না। বিদেশে সম্পদ থাকলেও চলবে না।