মোঃ করমুল্লাহ্: প্রথমে দেখা যাক উক্ত আইনের ৬(৩) ধারায় কি বলা হয়েছে? কোনো ব্যক্তির নামে ভূমির State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Act No. XXVIII of 1951 ) এর section 143 বা 144 এর অধীন প্রণীত বা হালনাগাদকৃত বলবৎ সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে এবং অনুরূপ খতিয়ান ও হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণক প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে, তিনি উক্ত ভূমি বিক্রয়, দান, হেবা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন বা দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না;
তবে, শর্ত থাকে যে, এই ধারার বিধানাবলি দ্বারা কোনো ভাবেই (Registration Act, 1908 (Act No XVI of 1908 ) বিধানাবলি খর্ব করবে না।
একই বিষয়ে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫৩গ ধারায় বলা হয়েছে যে, খতিয়ান ব্যতীত স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করা যাবে না:-
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ এবং প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০-এর অধীনে প্রস্তুতকৃত সর্বশেষ খতিয়ানে কোন সম্পত্তি সম্পর্কে কোন ব্যক্তির নাম না থাকলে কোন সম্পত্তি বিক্রয় করা যাবে না, এবং অন্যথায় যে কোন বিক্রয় বাতিল হবে।
বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হলে খতিয়ানে তার বা তার পূর্বপুরুষের নাম থাকতে হবে, বিক্রেতা উত্তরাধিকার ব্যতীত অন্য কোন পন্থায় মালিক হলে খতিয়ানে তার নাম থাকতে হবে।
একই বিষয়ে রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৫২ক ধারায় বলা হয়েছে যে, বিক্রয় দলিলে কতিপয় তথ্য সন্নিবেশিত না হলে রেজিস্ট্রারিং কর্মকর্তা তা রেজিস্ট্রি করবেন না, যথা :- কোন বিক্রয় দলিল রেজিস্ট্রির জন্য উপস্থান করা হলে রেজিস্ট্রারিং কর্মকর্তা তা রেজিস্ট্রি করবেন না যদি নিম্ন উল্লেখিত তথ্য সমূহ দলিলে অন্তর্ভুক্ত এবং দলিলের সাথে সংযুক্তি আকারে দাখিল করা না হয়,
যেমন;
(ক) উত্তরাধিকার ছাড়া অন্য কোন উপায়ে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকলে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর আওতায় প্রস্তুতকৃত তার নিজ নামে সর্বশেষ খতিয়ান;
(খ) উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকলে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর আওতায় প্রস্তুতকৃত তার নিজ নামে কিংবা পূর্ববর্তী নামে সর্বশেষ খতিয়ান;
(গ) সম্পত্তির প্রকৃতি;
(ঘ) সম্পত্তির মূল্য;
(ঙ) পরিসীমা ও দিক উল্লেখে সম্পত্তির হাত নকশা;
(চ) সম্পত্তিতে মালিকানা সম্পর্কিত বিগত ২৫ (পঁচিশ) বছরের ধারাবাহিক সংক্ষিপ্ত বর্ণনা; এবং
(ছ) তফসিলে উল্লেখিত সম্পত্তি ইতোপূর্বে হস্তান্তর করা হয় নাই এবং তাতে তার বৈধ স্বত্ব বহাল আছে মর্মে দাতা কর্তৃক হলফ নামা। (২০০৪ সনের ২৫নং আইন দ্বারা সংশোধিত)
একই বিষয়ে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন, ২০১২ এর ৬(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন:
রেজিস্ট্রেশন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন সম্পাদিত অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নির রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক এবং রেজিস্ট্রেশন আইনের section 52A এর বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে।
উপরোক্ত আইনগুলোর ধারা সমূহ একত্রে বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় যে, যে ভাবেই হোক না কেন, ভূমি হস্তান্তর করতে ভূমির মালিকের নামে সর্বশেষ খতিয়ান অথবা নামজারি থাকতে হবে।
কিন্তু ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এর ৬(৩) ধারার প্রভিসো তে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, এই ধারার বিধানাবলি দ্বারা কোনো ভাবেই (Registration Act, 1908 (Act No XVI of 1908 ) বিধানাবলি খর্ব করবে না।
এখন দেখা যাক রেজিস্ট্রেশন আইনে এর ব্যতিক্রম কিছু পাওয়া যায় কিনা!
যেহেতু ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশন আইন সম্পর্কে আলোচনা করেছি। উক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৫২ক(ক) ধারায় বলা হয়েছে যে, উত্তরাধিকার ছাড়া অন্য কোন উপায়ে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকলে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর আওতায় প্রস্তুতকৃত তাহার নিজ নামে সর্বশেষ খতিয়ান থাকতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভূমি যে কোনভাবে হস্তান্তর করার সময় সর্বশেষ খতিয়ান বা নামজারি খতিয়ান প্রয়োজন হবে না।
পরিশেষে বলা যায় যে, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ প্রণয়নের মাধ্যমে ভূমি হস্তান্তরে নতুন কোনো জটিলতা সৃষ্টি হয়নি। আগে যেভাবে ভূমি হস্তান্তর করা হতো এখনো সেভাবে হস্তান্তর করা যাবে। অর্থাৎ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভূমি যে কোনভাবে হস্তান্তর করার সময় সর্বশেষ খতিয়ান বা নামজারি খতিয়ান প্রয়োজন হবে না।
লেখক: অ্যাডভোকেট, চট্টগ্রাম জজ আদালত।