জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ তথা ডিএমপি ঢাকা মহানগরীর নিরাপত্তায় সুদীর্ঘকাল হতে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, চলমান রাজনৈতিক অবরোধ কিংবা অস্থিরতায় জনসাধারণ বা রাষ্ট্রের ক্ষয়ক্ষতি ও নাশকতা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে বাস মালিক এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে জনসচেতনতামূলক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহমেদের সভাপতিত্বে সোমবার (৬ নভেম্বর) ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের অফিসে এ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, অতিঃ উপ- পুলিশ কমিশনার (তেজগাঁও জোন), ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনারবৃন্দ, ইন্সপেক্টর (শহর ও যান) সকল এবং ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন রুটে চলমান পরিবহনের মালিকগণসহ অন্যান্য অংশীজনবৃন্দ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করেন।
অগ্নি-সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধে বিভিন্ন পরিবহন মালিকগণ তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ডিএমপির কমিশনারের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনার আলোকে পরিবহন মালিকগণসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অগ্নি- সন্ত্রাস, নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগে দায়িত্ব পালনের জন্য বিভিন্ন বাস্তবমুখী পরামর্শ দেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সকলকে উদ্যোমী হয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
সমন্বয় সভায় ডিসি যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে ও নাশকতা প্রতিরোধে নিম্নোক্ত বিষয়াদি গুরুত্বসহকারে বাস্তবায়নের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেন:
১. ডিজিটালাইজেশন আমাদের আশীর্বাদ, আর এই আশীর্বাদকে কাজে লাগিয়ে ড্রাইভার হেল্পারদের প্রতিটি স্টপেজে ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে, বাসগুলোতে সিসিটিভি ইন্সটল করা যায় কিনা তা বিবেচনার জন্য পরামর্শও দেন।
২. গাড়ির হেলপার ও সহযোগীকে মোবাইল ক্যামরার মাধ্যমে বাসে যাত্রীদের ছবি ও ভিডিও ধারণের মাধ্যমে সকলকে সচেতন করা। “অপরিচিতদের কাছ থেকে কিছু খাবেন না, পাশেরজন সম্পর্কে সচেতন থাকুন”- রাস্তাঘাটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর এটি একটি অতি পরিচিত কার্যকর সনাতন পদ্ধতি।
এই পদ্ধতি অবলম্বন করেই হেল্পাররা মাঝেমাঝে যাত্রীদের সচেতনমূলক বক্তব্য প্রদান করার মাধ্যমে সম্ভাব্য দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করবে, নাশকতাকারীদের প্রমাণাদি রাখবে এই পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেন।
৩. অগ্নিসংযোগের ফলে ঘটে যাওয়া গত কয়েকদিনের Modus operandi দেখে এটাই পরিষ্কার হয় যে, রাত ও ভোর বেলার যাত্রীহীন যানবাহনই দুষ্কৃতিকারীদের টার্গেট। এই বিষয়ে সবাইকে সর্তক করে রাত্রীকালীন নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি সারাক্ষণ নজরদারি রাখার নির্দেশনা দেন ।
৪. সকল গাড়িতে অবশ্যই Fire extinguisher (অগ্নি নির্বাপক) রাখা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনে চালক ও হেল্পারদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে পরিবহন মালিকগণকে দায়িত্ব পালন করতে পরামর্শ দেন।
৫. কোন যানবাহন যাতে দুই একজন যাত্রীর আশায় ফাঁকা রাস্তায় না দাঁড়ায় সেই বিষয়ে সর্তক করার পাশাপাশি পুলিশ ডিউটিরত জায়গায় যাত্রী উঠানামা করার পরামর্শ দেন।
৬. সামনের ও মাঝখানের সিট ফাঁকা রেখে কেউ যাতে ইচ্ছাকৃতভাবে পিছনে না বসে সেই বিষয়ে সর্তক করার পাশাপাশি সন্দেহজনক মনে হলে অতিদ্রুত পুলিশকে জানানোর জন্য পরামর্শ দেন।
৭. নির্দিষ্ট স্টপেজ ব্যতীত যাত্রী না উঠানোর পরামর্শ দেন।
৮. জরুরী প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার আহবান জানান।
চলমান এই নৈরাজ্য প্রতিকার নয়, প্রতিরোধই পারে কমিয়ে আনতে ব্যক্তিগত ও সরকারি ক্ষয়ক্ষতি। এই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষ নির্বিঘ্নে নিরাপদে বাড়ি ফিরবে এটাই আমাদের সকলের কাম্য। সভায় উপ-পুলিশ কমিশনার, ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগ মহোদয় উপস্থিত সকলকে গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদানের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।