সিনিয়র এডভোকেট হওয়া মানে বিচারপতিদের ভুল ধরা মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, এই জাজমেন্টটা এই কারণে ভুল। এটা বলার মতো কয়জন আইনজীবী আছে?
ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবীন আইনজীবীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে শনিবার (১১ নভেম্বর) এ বলেন তিনি। নবীন আইনজীবীদের পেশাগত মান উন্নয়ন ও আদালতের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অবহিত করতে ঢাকা আইনজীবী সমিতি এই ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন করে।
বিচারকরা ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, তাদেরও ভুল হতে পারে। তবে একই ভুল বারবার না করার জন্য বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালতকে সহায়তা করাই আইনজীবীদের কাজ। তিনি বলেন, মানুষের অধিকার রক্ষা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নবীন আইনজীবীদের ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাদের যাদের আমরা হাইকোর্টে এনরোলমেন্ট দিচ্ছি বা আপিলেড ডিভিশনে এনরোলমেন্ট দিচ্ছি বা সিনিয়র আইনজীবী করেছি। তাদের কে আমি সবসময় বলি আপনারা যারা সিনিয়র এডভোকেট এর লাইসেন্স নিয়েছেন। সিনিয়র এডভোকেট হওয়া মানে বিচারপতিদের ভুল ধরা। সিনিয়র এডভোকেটদের সার্টিফিকেটে লিখতে হয় যে, এই জাজমেন্টটা এই কারণে ভুল। এটা বলার মতো কয়জন আইনজীবী আছে? যারা আমরা পাঁচজন-ছয়জন আপিল বিভাগের বিচারপতি রায় দিলাম সেই রায়টাতে একটা ভুল ধরা। যে এই ভুলটা হয়ে গেছে বা এই ফ্যাক্টটা সামনে আসেনি। সামনে আসলে হয়তো রায় অন্যরকম কিছু হতো। এইরকম সার্টিফিকেট যিনি দিতে পারবেন। এইরকম যোগ্যতা যার হবে তিনি সিনিয়র আইনজীবী হবেন।
তিনি বলেন, সিনিয়র এডভোকেট সাহেবরা যদি সেটা কোটেশনে সেটা বলতে না পারে। ন্যাচারালি যদি আমাকে বলতে হয়। আমি চিফ জাস্টিস হিসেবে বলেছি দুই একদিন। সিনিয়র আইনজীবী বলুন আর আপিলেড ডিভিশনের আইনজীবী বলুন সেটা কিন্তু রিকল করার ক্ষমতা আছে। দেওয়ার যেমন ক্ষমতা আছে রিকল করারও ক্ষমতা আছে।
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের একজন বিচারক বলেছেন একদিন যদি দেখি রিলিফ (প্রতিকার) দিতে পারলাম না, আরেকদিন দেই। কিন্তু রিলিফটা কাকে দিচ্ছেন? রিলিফ তো দিচ্ছেন আপনি উকিলকে, উকিলের পকেট ভারী হবে। আপনি এ ভুলটা করবেন না। ভুল করার আগে বারবার চিন্তা করবেন। একই ধরনের আরেকটি মামলায় যদি তিনি আসেন তখন আপনি শোধরাবেন। অন্য কোনো মামলায় যদি ভুল সাবমিশন তিনি রাখেন রিলিফ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রিলিফ তখনই দেবেন যখন ক্লায়েন্টের মামলাটি সঠিকভাবে আপনার সামনে উপস্থাপন হবে। একই ধরনের মামলায় আপনি যে ভুলটা করেছেন সেই ভুলটা আর পুনরাবৃত্তি করবেন না। একবার ভুল করেছেন সেজন্য অন্য একটি মামলায় ওই অ্যাডভোকেটকে রিলিফ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা ফেভারেটিজম (আনুকূল্য) হয়ে যাবে।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান মামুনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জোবায়েরের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউর রহমান, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরী, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাশফিকুল ইসলাম, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবউল্ল্যাহ হিরু প্রমুখ।
এর আগে প্রধান বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসানের আগমন উপলক্ষে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ঢাকা জেলার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জনাব এ.এইচ. এম. হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া (জিন্না) এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জনাব সৈয়দ রেজাউর রহমান ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এ সময় নবীন আইনজীবীসহ অন্যান্য সিনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে শেষে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বাগানে বৃক্ষচারা রোপণ করেন প্রধান বিচারপতি।