মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ইসলামী ব্যাংক কক্সবাজারের টেকনাফ শাখার তিন জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়ের করেছে। জালিয়াতি করে ব্যাংকের ৯ গ্রাহকের ৬৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়।
দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বুধবার (২২ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি নিজেই মামলাটি রেকর্ড করেছেন বলে জানান। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বুধবার মামলাটি দায়েরের অনুমতি পাওয়া যায়।
মামলার আসামীরা হলেন- টেকনাফের দক্ষিণ হ্নীলা জাদিমুড়ার দমদমিয়া এলাকার ঠান্ডা মিয়ার পুত্র, ব্যাংকের কর্মকর্তা ইমাম হোসেন, চট্টগ্রামের পটিয়ার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামের মীর আহমদের পুত্র, ব্যাংকের জুনিয়র কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ জাবেদ এবং পটিয়ার পানচুরিয়া চরকানাই শেখ পাড়ার আমিনুল হকের পুত্র, ব্যাংকের স্টাফ মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম।
দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন আরো জানান, মামলাটি তদন্তকালে জালিয়তি করে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে অন্য কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদেরকেও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ব্যাংক, পুলিশ ও দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ নভেম্বর ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার এক গ্রাহক তাঁর হিসাবের স্থিতিতে গরমিল পাওয়ায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ আলতাফ হোসেনের কাছে মৌখিকভাবে তিনি এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। পরে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থাপক এ অভিযোগের সত্যতা পান।
একইভাবে গত ১২ নভেম্বর ব্যাংকের আরেক গ্রাহক তাঁর হিসাবের স্থিতির ব্যাপারেও একই অভিযোগ করেন। সেটিও ব্যবস্থাপক নিজ উদ্যোগে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পান।এভাবে ব্যাংকের ৯টি হিসাবে প্রাথমিক তদন্তে মোট ৬২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জালিয়াতি করে উত্তোলনের প্রমাণ পান ব্যবস্থাপক।
প্রমাণ পাওয়ার পর জালিয়াতির মূলহোতা অভিযুক্ত ইমাম হোসেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে প্রদত্ত তার লিখিত বক্তব্যে জালিয়াতি করে গ্রাহকের হিসাব থেকে ৬৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন। তিনজন পরস্পর যোগসাজশে এ জালিয়াতি সংগঠিত করেছে বলে অভিযুক্ত ইমাম হোসেন স্বীকারোক্তি প্রদান করেন।
পরে ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন ব্যাংকের উল্লেখিত তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় গত ১৫ নভেম্বর এজাহার দায়ের করেন। কিন্তু ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি দুদকের তপশিলভুক্ত অপরাধের ধারা হওয়ায় টেকনাফ থানায় এজাহারটি মামলা হিসাবে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এজাহারটি টেকনাফ থানা থেকে দুদকের কক্সবাজর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। তবে ব্যাংকের অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তাকে থানা কর্তৃপক্ষ ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কারাগারে পাঠানো এসব কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। বর্তমানে অভিযুক্ত তিনজনই কারাগারে রয়েছে।
অপরদিকে, ৩ ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি চেয়ে গত ১৭ নভেম্বর দুদকের কক্সবাজারের জেলা কার্যালয় থেকে প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন সহ চিঠি প্রেরণ করা হয়। বুধবার প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর ব্যাংক ম্যানেজারের দায়ের করা এজাহারটি দুদকে মামলা হিসাবে রেকর্ড করা হয়।
জালিয়াতি করে গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন পূর্বক আত্মসাতের বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি অডিট টিম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পৃথক আরেকটি অডিট টিম টেকনাফ ইসলামী ব্যাংকের যাবতীয় হিসাব নিকাশ নীরিক্ষা করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।