মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজারের উখিয়ার চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের মামলায় ৬ জন আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার করে অর্থদন্ড, অনাদয়ে আরো ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মহিউদ্দিন মুরাদ মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) এ রায় ঘোষণা করেন।
দন্ডিত আসামীরা হলেন- মৃত হাকিম মিয়ার পুত্র মুফিজুল আলম সিকদার, জাগির হোসেন সিকদারের পুত্র আবু কাউসার, জাফর আলম মিন্টুর পুত্র সাজ্জাদ হোসেন সিকদার, নুর আহমদের পুত্র শামশুল আলম, মৃত হাকিম আলী সিকদারের পুত্র নুরুল কবির ও আবুল ফরাজ সিকদারের পুত্র শাকের আলী। দন্ডিতের সকলের বাড়ি উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ছোট ইনানী গ্রামে। রায় ঘোষণার সময় শাকের আলী ব্যতীত অন্যান্য আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দন্ডিত শাকের আলী পলাতক রয়েছে।
যাবজ্জীবন দন্ডে দন্ডিত একই আসামীদের ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০৭ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে প্রত্যেককে আরো ১০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ হাজার করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদয়ে আরো ২ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে একই আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী মামলাটি পরিচালনা করেন। আসামীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অ্যাডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক, অ্যাডভোকেট দীলিপ কুমার দাশ, অ্যাডভোকেট আবুল কাসেম, অ্যাডভোকেট খায়রুল আমিন, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী এবং স্ট্যাট ডিফেন্স আইনজীবী হিসাবে অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম-৪ মামলাটি পরিচালনা করেন।
একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসাইন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ঘটনার ২২ বছর পর চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের মামলাটি রায় ঘোষণা করা হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০০১ সালের ২৪ জুলাই কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ছোট ইনানী গ্রামে জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে একদল সশস্ত্র অস্ত্রধারী হামলা চালিয়ে একই এলাকার ছলিম উল্লাহ প্রকাশ পুতুন মিস্ত্রি, শামসুল আলম প্রকাশ গুরা মিয়া ও আবদুস সালাম দফাদারকে হত্যা করে। হামলাকারীরা একইদিন নিহত আবদুস সালাম দফাদারের বাড়িতে ঢুকে তার পরিবারের ৫ সদস্যকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করলে তারা গুরতর আহত হন।
চাঞ্চল্যকর এই তিন খুনের ঘটনায় একই এলাকার নজীর হোসেন চৌকিদার বাদী হয়ে ২৯ জনকে আসামী করে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার উখিয়া থানা মামলা নম্বর : ১২, তারিখ : ২৫/০৭/২০০১ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৯৯/২০০১ ইংরেজি (উখিয়া) এবং এসটি মামলা নম্বর : ২০১/২০০৮ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
মামলাটি বিচারের জন্য কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০০৯ সালের ২৪ মে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় ২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীদের পক্ষে তাদের জেরা, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, নিহতদের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট যাচাই, অন্যান্য আলামত পর্যালোচনা, আসামীদের পক্ষে আদালতে একজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হয়।
রায়ে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/১৪৯ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে বিজ্ঞ বিচারক মহিউদ্দিন মুরাদ আসামী মুফিজুল আলম সিকদার, আবু কাউসার, সাজ্জাদ হোসেন সিকদার, শামশুল আলম, নুরুল কবির ও শাকের আলী’কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, প্রত্যেককে ৫০ হাজার করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদয়ে আরো ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
যাবজ্জীবন দন্ডে দন্ডিত একই আসামীদের ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০৭ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে প্রত্যেককে আরো পৃথক ১০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ হাজার করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদয়ে আরো ২ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। ৩ টি পৃথক ধারায় প্রদত্ত শাস্তি একইসাথে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার ৮ জন আসামী মৃত্যুবরন করায় রায়ে তাদেরকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং বাকী আসামীদের বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে। ঘটনার প্রায় ২২ বছর পর চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের এই মামলাটি রায় ঘোষণা করা হয়।