নিজের বিলাসবহুল ২টি গাড়ি সরকারের কাছে ফেরত দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসা। একইসঙ্গে এই দুটি গাড়ি বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ গণপরিবহনে ব্যয় করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসা শুক্রবার তার দুটি বিলাসবহুল গাড়ি ফেরত দিয়েছেন এবং সরকারকে সেগুলো বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ গণপরিবহনে ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
পাকিস্তানের ফেডারেল সরকারের ক্যাবিনেট সেক্রেটারি এবং পাঞ্জাবের মুখ্য সচিবের কাছে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রারের পাঠানো একটি চিঠিতে কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, শীর্ষ আদালত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধান বিচারপতির জন্য ৬ কোটি ১০ লাখ রুপি খরচ করে ২ হাজার ৯৯৬ সিসির নতুন মার্সিডিজ বেঞ্জ সেডান কিনেছিল।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির ব্যবহারের জন্য পাঞ্জাব সরকার একেবারে নতুন বুলেট-প্রুফ টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িও সরবরাহ করে, যা লাহোরের সুপ্রিম কোর্টের রেস্ট হাউসে পার্ক করা আছে।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যেক বিচারপতিকে নিয়মানুযায়ী দুটি করে গাড়ি দেওয়া হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসা উল্লিখিত মার্সিডিজ সেডান বা টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ব্যবহার করেননি। সাংবিধানিক এবং সরকারি অফিসে দায়িত্বরতদের ব্যবহারের জন্য আমদানি করা বিলাসবহুল যানবাহন কিনতে সরকারি অর্থ ব্যয় করাটা অনুপযুক্ত।
‘অতএব, এই যানবাহনগুলো সংগ্রহ করে নিলাম করা যেতে পারে এবং বিক্রি থেকে আদায়কৃত অর্থ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গণপরিবহনে ব্যয় করা যেতে পারে’, বলেও চিঠিতে জানানো হয়েছে।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিসেবে কাজী ফয়েজ ঈসা শপথ নেন। অবশ্য প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ঈসার মেয়াদকাল বেশ সংক্ষিপ্ত হবে। কারণ ২০২৪ সালের ২৫ অক্টোবর তিনি এই পদ থেকে অবসর নেবেন।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন কাজী ফয়েজ ঈসা।
কে এই বিচারপতি ঈসা?
১৯৫৯ সালের ২৬ অক্টোবর পাকিস্তানের কোয়েটায় জন্মগ্রহণ করেন বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসা। তিনি বেলুচিস্তানের পিশিন শহরের প্রয়াত কাজী মোহাম্মদ ঈসার ছেলে। বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসার বাবা পাকিস্তান আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন এবং দেশটির প্রতিষ্ঠাতা কায়েদ-ই-আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন বলছে, বিচারপতি ঈসার বাবা ছিলেন বেলুচিস্তান প্রদেশের প্রথম ব্যক্তি যিনি বার-অ্যাট-ল ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন এবং লন্ডন থেকে ফিরে আসার পর বেলুচিস্তানে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। তার বাবা বেলুচিস্তান থেকে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির একমাত্র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বিচারপতি ঈসার মা বেগম সাইদা ঈসা একজন সমাজকর্মী ছিলেন এবং শিক্ষা, শিশু ও নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করে এমন হাসপাতাল ও অন্যান্য দাতব্য সংস্থার বোর্ডে সম্মানসূচক পদে কাজও করেছিলেন তিনি।
কোয়েটায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করার পর ইসা করাচিতে চলে যান এবং করাচি গ্রামার স্কুল (কেজিএস) থেকে তার ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল শেষ করেন। এরপর তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করতে লন্ডনে যান এবং সেখানে তিনি ইনস অব কোর্ট স্কুল ল থেকে বার প্রফেশনাল পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।
বিচারপতি ইসা ১৯৮৫ সালের ৩০ জানুয়ারি বেলুচিস্তান হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট এবং ১৯৯৮ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট হিসাবে নথিভুক্ত হন। তিনি পাকিস্তানের হাইকোর্ট, ফেডারেল শরীয়ত আদালত এবং পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে ২৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে আইন প্রাকটিস করেছেন।
তিনি বেলুচিস্তান হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, সিন্ধু হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এবং পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য। বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট তাকে অ্যামিকাস কিউরি হিসাবে ডাকত এবং কিছু জটিল মামলায় তার সহায়তা গ্রহণ করত। তিনি আন্তর্জাতিক সালিশও পরিচালনা করেছেন।