কাবিননামা ছাড়াই বছরের পর বছর সংসার করার পর ভুক্তভোগী নারীসহ নিজের কন্যাসন্তানকে অস্বীকার করার অভিযোগ ওঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। আদালতে এ নিয়ে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
আজ বুধবার (৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে টিনা রিভারো নামে এক ভুক্তভোগী মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।
আসামির নাম নাইম রহমান (৩৪)। অভিযুক্ত নাইম রহমান কোতোয়ালি থানার ১৯ নম্বর বান্ডেল রোড এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম মাহাবুব রহমান।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়- ভুক্তভোগী নারী জন্মসূত্রে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। ২০০৮ সালে নাইম রহমানের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সম্পর্ক থেকে ২০১৪ সালে পরিবার-পরিজন ছেড়ে তিনি নাইমের সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে চলে যান।
ওই সময় নাইম তাকে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে একজন মাওলানা ডেকে প্রথমে তিনি ভুক্তভোগীকে ধর্মান্তরিত করেন। এরপর মাওলানা বিয়ে পড়ান। ওই সময় নারীর কাছ থেকে একটি কাগজে সই নেওয়া হয়। তবে কি রকম কাগজে সই নেওয়া হয়েছিল সেটি ভুক্তভোগী জানতেন না। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীকে নাইম বলে তাদের মধ্যে বিয়ে হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী টিনা রিভারো বলেন, এরপর আমরা সংসার জীবন শুরু করি। আমাদের ঘরে একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। নাইম আগে থেকে আইপিএসের ব্যবসা করতেন। বিয়ের কিছুদিন পর তার দোকান আগুনে পুড়ে যায়। এরপর থেকে নাইম আমার কাছে বিভিন্ন কৌশলে টাকা দাবি করতেন। আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলতেন।
তিনি বলেন, নানা সময়ে আমি গহনা বিক্রি করে অথবা আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা এনে নাইমকে দিয়েছি। কিন্তু তার টাকা দাবি বন্ধ না হওয়ায় আমি একপর্যায়ে তাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিই। এ নিয়ে টানাপোড়েনের জেরে ২০১৯ সালের নাঈম আমাদের ফেলে চলে যান। তিনি আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ করছেন না। আমি তার পরিবার-পরিজন সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুবিচার পাইনি।
‘এখন নাইম বলছে সে আমাকে বিয়ে করেনি। তার কোনো সন্তান নেই। আমাদের বিয়ের সময় নাকি কোনো কাবিন করা হয়নি। অর্থাৎ সে আমার সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা করে সংসার করেছে।’
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, অভিযুক্ত নাইম আমার মক্কেলকে কোনোরকম কাবিননামা ছাড়াই বছরের পর বছর একসঙ্গে থেকে এখন অস্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৪৯৩ ধারায় মামলা করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কোতোয়ালি থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, দণ্ডবিধির ৪৯৩ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করান, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মতভাবে না হয় এবং ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন, তবে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।