প্রার্থিতা ফিরে পেতে ৩ হেভিওয়েট প্রার্থীর রিট

আওয়ামী লীগের ২ জনের রিট খারিজ, হাইকোর্টে প্রার্থিতা ফেরত পেলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী

দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রশ্নে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন। পরে নির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন এই ৩ হেভিওয়েট প্রার্থী। ওই তিন প্রার্থীর মধ্যে দুইজনের রিট খারিজ করে দিয়েছেন আদালত, তবে প্রার্থীতা ফেরত পেয়েছেন একজন।

ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা এই ৩ প্রার্থী হলেন— বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদ। বরিশাল-৫ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হক।

এর মধ্যে বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদ ও ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। এর ফলে সাদিক আবদুল্লাহর নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই।

আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর রিট আবেদন খারিজ করে সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. ইকবাল কবীর ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি আবু তাহের সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ।

নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত আপিল শুনানি

এর আগে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুইজনসহ মোট তিন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আপিল শুনানিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বরিশাল-৪ আসনের শাম্মী আহমেদ ও ফরিদপুর-৩ আসনের শামীম হক এবং বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করেছে সংস্থাটি।

তিন প্রার্থীই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও তাদের মধ্যে বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ দলের মনোনয়ন না পেয়ে বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আর শাম্মী আহম্মেদ বরিশাল-৪ ও শামীম হক ফরিদপুর-৩ আসনে পেয়েছিলেন নৌকার মনোনয়ন।

শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত আপিল শুনানিতে এই সিদ্ধান্ত আসে।

বরিশাল-৫

সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়ন বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন নৌকার প্রার্থী পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আনোয়ার হোসাইন বলেন, “আমেরিকার নাগরিকদের ৬ মাস পর পর রিনিউ করতে হয়। গত ৫ বছর তিনি আমেরিকায় যাননি। তার নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে গেছে।”

বরিশাল-৪

বরিশাল-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথ পাল্টাপাল্টি আপিল করেছিলেন। শুনানিতে পঙ্কজের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লেও শাম্মী বাদ পড়ে গেলেন দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে।

শাম্মী আহম্মেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সেটি ফিরে পেতে আপিল করেছিলেন তিনি। এছাড়া তথ্য গোপনের অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজের প্রার্থিতা বাতিলেরও আবেদন করেছিলেন তিনি।

অন্যদিকে শাম্মীর প্রার্থিতা ঠেকাতে পঙ্কজের আবেদনে বলা হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও তা মনোনয়নপত্রে গোপন করেছিলেন নৌকার প্রার্থী।

আপিলে শাম্মীর দুটি আবেদনই নামঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশন; টিকে যায় পঙ্কজের প্রার্থিতা।

ফরিদপুর-৩

ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক একে অপরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে পাল্টাপাল্টি আপিল করেছিলেন ইসিতে।

এই দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধেই দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ ছিল। শামীমের দাবি, আজাদ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আর আজাদের দাবি, শামীমের নাগরিকত্ব আছে নেদারল্যান্ডসে।

শুক্রবার ষষ্ঠ দিনের শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের সামনে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ দিতে পারায় বৈধ হিসেবে এ কে আজাদের প্রার্থিতা টিকে গেলেও শামীম হকেরটা বাতিল করা হয়।

আপিল শুনানিতে দুই পক্ষেরই যুক্তি শোনে কমিশন। শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে কমিশনের সামনে এ কে আজাদের আইনজীবী জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শামীম হকের দ্বৈত নাগরিকত্ব ছিল। ফলে তিনি নির্বাচনে বৈধ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

অন্যদিকে শামীম হকের আইনজীবী বলেন, তারা নেদারল্যান্ডস দূতাবাসে সেদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের আবেদন করেছেন। তাদের কাছে তথ্য প্রমাণ রয়েছে।

আইনজীবীর ভাষ্য, “শামীম হক নাগরিত্ব ত্যাগ করেছেন। কিন্তু আইনের কোথাও নেই যে, এই আবেদনটি গ্রহণ করতে হবে।”

এরপরই কমিশন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদের আপিলের পক্ষে রায় দেন এবং শামীম হক প্রার্থিতা হারান।

পরে এ কে আজাদের বিরুদ্ধে করা শামীম হকের আপিল শুনানি হয়। শুনানিতে শামীম হকের আইনজীবী এ কে আজাদের আমেরিকার নাগরিকত্বের তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে না পারায় তাদের আপিল নামঞ্জুর করে কমিশন।