সিরাজ প্রামাণিক: আপনি ঘরে বসে কিংবা জেলখানায় আটক থেকেও জমি বিক্রি এবং রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারবেন। আপনি যদি রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে অক্ষম বা অপারগ হন কিংবা নিরাপত্তার অভাব অনুভব করেন, আপনি যদি পর্দানশীল মহিলা হন, কিংবা দেওয়ানী বা ফৌজদারী কার্যবিধির অধীন কারাগারে আটক থাকেন তাহলে কমিশন এর মাধ্যমে আপনি বাসায় বসে জমি রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারেন।
আপনি স্ব শরীরে সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে আসতে অপারগতার কারণে ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট এর ৩৮ (১) ধারা মতে, দলিল সম্পাদন স্বীকারোক্তি গ্রহণের জন্য কমিশনের প্রার্থনা করে সাবরেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করে আপনার আবাসস্থলে নিয়ে গিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে দিতে পারবেন।
এরূপ আবেদনের ভিত্তিতে সাবরেজিস্ট্রার নিজে বা তার পাঠানো প্রতিনিধি দলিল দাতার বাসস্থানে গিয়ে সম্পাদন স্বীকারোক্তি গ্রহণের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি করার ব্যবস্থা করে থাকেন। এজন্য আলাদা কমিশন ফিস জমা দিতে হয়। এ বিষয়ে রেজিষ্ট্রেশন বিধিমালা ৩৫ বিধিতে কমিশনে জমি রেজিস্ট্রিতে কে যাবেন, কি কাজ করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে।
কমিশন ফিস বিষয়ে পর্দানশীল মহিলার ক্ষেত্রে ২০০ টাকা এবং অন্যন্যদের ক্ষেত্রে মাত্র ১০০ টাকা গ্রহণের কথা বলা আছে। এর সাথে যানবাহন খরচ ও অন্যান্য খরচের কথা আলাদা করে বলা আছে। কিন্তু বাস্তবে রেজিষ্ট্রেশন বিধিমালা ও ফিস উপেক্ষা করে অনেক বেশী টাকা নিয়ে কমিশনে জমি রেজিষ্ট্রি করে থাকেন।
মনে রাখবেন শুধু কমিশনে নয়, ভিজিটেও দলিল রেজিস্ট্রি করা যায়। দলিলদাতা এবং দলিল গ্রহীতা উভয়ের কেউই যদি রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিল দাখিল করতে না পারেন সেক্ষেত্রে ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট এর ৩১ ধারা মতে, দলিলদাতার বাড়িতে গিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে আবেদন করা যাবে।
কমিশন বা ভিজিটের জন্য আবেদন করা হলে রেজিস্ট্রারিং অফিসার দাতার সম্পাদন স্বীকারোক্তি দলিলে লিখে দলিলটি রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করবেন। রেজিষ্টারিং অফিসার নিজে যেতে না পারলে তার অফিসের যে কোনও অফিসার বা বেতনভোগী কর্মচারীকে দিয়ে তার কমিশন জারি করতে পারবেন। ভিজিটের জন্য আবেদন করলে ভিজিট ফি সঙ্গে জমা দিতে হবে।
কত টাকা ভিজিট ফিস এ বিষয়ে রেজিষ্ট্রেশন বিধিমালা ৩২ এ বলা আছে। ১৯০৮ সালের রেজিষ্ট্রেশন এ্যাক্ট এর ৩১ ধারার বিধান অনুযায়ী যদি কোন কর্মকর্তাকে কোন ব্যক্তির আবাস্থলে গমন করতে হয়, তাহলে তার প্রদেয় ভিজিট ফিস মাত্র ৩০০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে অনেক বেশী টাকা দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করতে হয়।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা, আইনের শিক্ষক ও আইন গবেষক। ইমেইল: seraj.pramanik@gmail.com