সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়া তিন বিচারপতি শপথ নিয়েছেন। তারা হলেন- বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান তাদের শপথবাক্য পাঠ করান।
এসময় আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ এবং শপথ পাঠকারী তিন বিচারপতির পরিবারের সদস্যবৃন্দ, এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক শাহ মনজুরুল হক এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী।
এর আগে বুধবার (২৪ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তিনজন বিচারপতি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তাদের নিয়োগ দিয়ে ওইদিন প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের, হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত তিনজন বিচারককে তাদের শপথ গ্রহণের তারিখ হতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ করেছেন।
বর্তমানে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে পাঁচজন বিচারপতি রয়েছেন। নতুন তিন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ায় আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়াল আটজনে।
বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ
মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ১৯৫৭ সালের ১ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
হাফিজ ১৯৮২ সালে ঢাকা জেলা আদালতে আইন পেশায় যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন আইনজীবী হন।
তিনি ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে নিযুক্ত হন। ২৭ এপ্রিল ২০০৫-এ, হাফিজকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক করা হয়।
বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম
শাহিনুর ইসলামের জন্ম ১৯৫৮ সালের ৭ এপ্রিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক পড়াশোনা শেষে তিনি ময়মনসিংহ জেলা বারে যোগ দেন এবং দায়রা আদালতের পাশাপাশি উচ্চ আদালতে ফৌজদারি আইন অনুশীলন করেন।
তিনি ফৌজদারি কার্যবিধি ও আপিলের আইন বিশেষজ্ঞ। তিনি নেগোসিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যাক্ট, শুল্ক আইন, আবগারি আইন এবং কোম্পানির আইনে মামলা-মোকদ্দমা মামলার আওতাধীন নাগরিক বিষয় পরিচালনা করেছিলেন।
বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ১৯৮৩ সালের ২০ এপ্রিল মুনসেফ হিসেবে জুডিশিয়াল সার্ভিসে যোগদান করেন এবং ২০০১ সালের জানুয়ারিতে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান।
তিনি নড়াইল, হবিগঞ্জে জেলা ও দায়রা জজ এবং ঢাকার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে কাজ করেন।
২০১০ সালের এপ্রিল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর তিনি ২০১২ সালের মার্চে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের সদস্য নিযুক্ত হন।
এরপর ২০১৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে উন্নীত হন এবং পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর সদস্য হিসাবে পুনরায় নিযুক্ত হন।
বিচারপতি কাশেফা হোসেন
কাশেফা হোসেনের জন্ম ১৯৫৮ সালের ১ জুলাই। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে তিনি আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিচারপতি কাশেফা হোসেন ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এবং ২০০৩ সালে আপিল বিভাগের একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে নথিভুক্ত হন। এরপর ২০১৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত জজ হিসেবে উন্নীত। তিনি বাংলাদেশের হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত নারী বিচারকদের মধ্যে সপ্তম।