বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। কায়সার কামালের বিরুদ্ধে অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্যের জেরে তিনি এ দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের এই সংগঠনের প্যাডে গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল) ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সইকৃত এ সংক্রান্ত চিঠি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের হাতে এসেছে।
চিঠির ভাষ্যমতে, গত ২২ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে কায়সার কামালের বিরুদ্ধে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য প্রদান করেছেন ব্যারিস্টার খোকন যা ব্যারিস্টার কামালের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে বলে উপলব্ধি করেছেন ব্যারিস্টার খোকন। সে কারণে তিনি গভীরভাবে অনুতপ্ত।
এজন্য একজন সিনিয়র সহকর্মী হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে ব্যারিস্টার খোকন দুঃখ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি আশা করেন যে ব্যারিস্টার কামাল বিষয়টি নিয়ে তাঁর প্রতি আর কোন বিরূপ ধারণা পোষণ করে থাকবেন না।
এদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহ সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আজ মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালের কাছে ব্যারিস্টার খোকন দুঃখ প্রকাশ করায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
গত ২১ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনককে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহ সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
জাতীয়তবাদী আইনজীবী ফোরামের দপ্তর সম্পাদক মো. জিয়াউর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে তাকে অব্যাহতির বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৬ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাব ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি/সম্পাদকদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে আপনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সভাপতি হিসেবে আপনার এমন কার্যক্রমকে দলীয় চরম শৃঙ্খলা পরিপন্থি হিসেবে গণ্য করে সর্বসম্মত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করেন।
গত ৪ এপ্রিল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদের নির্বাচনে বিএনপির প্যানেল থেকে বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সুপ্রিম কোর্ট বারের বিদায়ী সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।
৪ এপ্রিল বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে বিএনপির প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচিত তিন জন ওইদিন দায়িত্ব গ্রহণের সময় উপস্থিত ছিলেন না।
এছাড়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কোনো পদধারী নেতা দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। শুধু ব্যারিস্টার খোকনের অনুসারী বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে আওয়ামী লীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হকসহ ১০ জন দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট বারের বিদায়ী কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদের নির্বাচনে বিএনপির প্যানেল থেকে বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চার জনকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে চিঠি দেয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এ চিঠি দেন।
চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি/সম্পাদকদের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিগত ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের পর গত ১০ মার্চ ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ন্যায়সংগত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপনাকে/আপনাদের এই মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, আপনি/ আপনারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদকালের দায়িত্বগ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। আপনি/আপনারা দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে দলীয় এ সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করবেন।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি জায়েজ করতে আপনাদের নামকাওয়াস্তে বিজয়ী দেখানো হয়েছে। আইনজীবী সমাজ ও দেশের আপামর জনগণ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করেছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারটি পদে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হন। অন্যদিকে সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হকসহ ১০টি পদে আওয়ামী লীগের প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হন।
গত ১০ মার্চ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়ের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন।
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে বিজয়ী বিএনপির অন্য তিন জন হলেন সৈয়দ ফজলে এলাহী অভি, ফাতিমা আক্তার ও মো. শফিকুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে বিজয়ী অন্য ৯ জন হলেন– সহ সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও ড. দেওয়ান মো. আবু ওবায়েদ হোসেন, ট্রেজারার পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনছারী, সহ সম্পাদক পদে মো. হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির (পল্লব), সদস্য পদে রাশেদুল হক খোকন, মো. রায়হান রনী, মো. বেল্লাল হোসেন (শাহীন) ও খালেদ মোশাররফ (রিপন)।