গাছ কাটা বন্ধে ঢাকার পরিবেশ আদালতে ২১ বছরে একটি মামলাও হয়নি। আদালতসংশ্লিষ্টদের দাবি, গাছ কাটা পরিবেশ আইনের মধ্যে না পড়ায় মামলা করা হয় না। এছাড়া পরিবেশ আদালতে সাধারণ মানুষ অথবা পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সরাসরি মামলা করতে পারে না। এ কারণে এ আদালতে মামলার সংখ্যা খুবই কম।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে- পরিবেশ সংরক্ষণ আইন শিগগিরই সংশোধন করা হবে। সংশোধিত আইনে সাধারণ মানুষ ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মামলা করার সুযোগ পাবে। পরিবেশবাদীদের দাবি, গাছ কাটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন প্রয়োজন।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী- পরিবেশ দূষণসংক্রান্ত কোনো বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে প্রথমে অভিযোগ দিতে হয়। ৬০ দিনের মধ্যে অধিদপ্তর কোনো পদক্ষেপ না নিলে ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করতে পারে।
পরিবেশ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জানে আলম বলেন, সাধারণ মানুষ সরাসরি মামলা করতে না পারার কারণেই আদালতে মামলা কম। মামলা করতে হলে আগে পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানাতে হয়। এতে দেখা যায়-অধিদপ্তরেই অধিকাংশ অভিযোগ মীমাংসা হয়ে যায়। এ কারণেও পরিবেশ আদালতে মামলা কম।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে- পরিবেশ আইনে পরিবেশ অধিদপ্তরকে মামলা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের অনুসন্ধান, মামলা ও তদন্ত সবই পরিবেশ অধিদপ্তর করে। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না।
এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম বলেন, সাজা না হলে পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ বন্ধ হবে না। আইন সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবেশসংক্রান্ত সব অপরাধের বিচারের ক্ষমতা পরিবেশ আদালতকে দেওয়া জরুরি। পরিবেশ রক্ষায় সরাসরি মামলা করতে আইন সংশোধন করা প্রয়োজন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক খোন্দকার মো. ফজলুল হক বলেন, সারা দেশে আমাদের লোকবল কম থাকায় মামলার সংখ্যা অনেক কম। বিভিন্ন জেলায় দেখা গেছে-দুজন কর্মকর্তা আছেন। মামলা ও তদন্ত করা এবং চার্জশিট দিতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ আরও অনেক কিছুই তাদের করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন সংশোধন হচ্ছে। সংশোধিত আইনের মধ্যে সাধারণ জনগণ ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে মামলা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যেই আইন সংশোধন হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ আইনে মামলা কম হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো-এ আদালতের এখতিয়ার স্পষ্ট নয়। আদালতকে কেবল পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীন অপরাধগুলো বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীনে পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা খুব বেশি নেই। ফলে অনেক অপরাধ এ আদালতের এখতিয়ারের বাইরে থেকে যায়। মামলা করার ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর আগ্রহ দেখায় না। এ ব্যাপারে অধিদপ্তর অলস।
তিনি বলেন, গাছ কাটা রোধে আইন সংশোধন করতে হবে।
জানা গেছে, ২০০৩ সালে পরিবেশ আদালত গঠন করা হয়। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১ বছরে ঢাকায় ৫৮৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭২টির নিষ্পত্তি হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১১৫টি।
এগুলো সবই-নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ, ইটভাটার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ, নদী থেকে বালু তুলে তীর দখলের অভিযোগে করা মামলা। আর গাছ কাটা, পাহাড় কাটা পরিবেশ আইনের অধীনে না পড়ায় কোনো মামলা নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী- চট্টগ্রামে বিচারাধীন মামলা ৩০৮টি, সিলেটে ১৪৯টি এবং বিভিন্ন জেলায় স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১ হাজার ২৯টি মামলা বিচারাধীন।