মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : দুই লাখ ইয়াবা টেবলেট পাচারের মামলায় ২ জন আসামীকে যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ আজ মঙ্গলবার (১১ জুন) এ রায় প্রদান করেন।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডিত আসামীরা হলেন- নুরুল আলম ও সমেদা খাতুনের পুত্র মোঃ তারেক (২০) এবং মৃত ফেরদৌস ও সলিমা খাতুনের পুত্র মোঃ দেলোয়ার হোসেন। উভয়ে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী হাকিম পাড়ার বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্র পক্ষে একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোঃ রেজাউর রহমান রেজা এবং আসামীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম কাজল মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর রাত ২টা ৪০ মিনিটের দিকে র্যাব-১৫ এর একটি টিম এক অভিযান চালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ময়নার ঘোনাস্থ পিআইপি অফিসের সামনে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার অভিমূখী একটি ডাম্পার ট্রাক আটক করে।
যার নম্বর চট্ট মেট্টো ন- ১১-০৪০৩। পরে ডাম্পার ট্রাকের ড্রাইভার মোঃ তারেক ও হেলপার মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে তল্লাশি করে তাদের দেখানো মতে উভয়ের কাছ থেকে এক লক্ষ করে ২ লক্ষ পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় র্যাব-১৫ এর হাবিলদার মোঃ নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে ড্রাইভার মোঃ তারেক ও হেলপার মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে আসামী করে উখিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার উখিয়া থানা মামলা নম্বর : ৪৬, তারিখ : ১৬/১১/২০২১ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৯৪৮/২০২১ ইংরেজি (উখিয়া) এবং এসটি মামলা নম্বর : ১১৩২/২০২২ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
২০২২ সালের ২৫ জুলাই কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার কাজ শুরু হয়। মামলায় ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য্য করা হয়।
ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১০ (গ) ধারায় আসামী ডাম্পার ট্রাকের ড্রাইভার মোঃ তারেক ও হেলপার মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা মূলে দন্ডিত আসামী ড্রাইভার মোঃ তারেক ও হেলপার মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করার মাত্র এক বছর ১০ মাস ১৮ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোঃ রেজাউর রহমান রেজা বলেন, রাষ্ট্র পক্ষ মামলার রায়ে সন্তুষ্ট।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার জেলা জজশীপের আওতাধীন মাদক, খুন, অস্ত্র সহ চাঞ্চল্যকর মামলা গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির জন্য ইতিমধ্যে বহুমুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার কিছু ইতিবাচক কার্যক্রম এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে।