বাংলাদেশের সাথে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সংযোগকারী রেল ট্রানজিট সমোঝোতা চুক্তি বাতিলের দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আজ বুধবার (২৬ জুন) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ আইনি নোটিশ প্রেরণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান।
আইনি নোটিশে রেল মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও ভবিষ্যতে চীনের সাথে বাংলাদেশের সামরিক সংঘাত এড়াতে এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়” নীতি অনুসরণ করে আসছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সংঘাত ও সহিংসতা থেকে নিজেকে সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর সাথে “ব্যালেন্স অফ পাওয়ার” (Balance of Power) নীতি অনুসরণ করে আসছে।
কিন্তু জুন ২০২৪ এ বাংলাদেশ সরকারের সাথে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের রেল ট্রানজিট সংক্রান্ত সমোঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশের “ব্যালেন্স অফ পাওয়ার” (Balance of Power) নীতি হুমকির মুখে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে ভারতের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে চীনের সাথে বাংলাদেশের সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: অপরাধী যেখানেই লুকিয়ে থাকুক আদালত ধরতে সক্ষম : আপিল বিভাগ
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের মধ্যে রেল যোগাযোগ ব্যাবস্থা নতুন কিছু নয়। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট স্বাভাবিক কোন বিষয় নয়। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অবস্থা স্বাভাবিক নয়। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে যারা ভারত থেকে স্বাধীনতা চায়।
এছাড়া ভারতের অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের সাথে ব্যাপক বিবাদ রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে ভারত ও চীনের নিয়মিত সংঘাত লেগেই থাকে এবং ইতিপূর্বে ভারত ও চীনের সাথে যুদ্ধ হয়েছে। এসব কারণে ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে দ্রুত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট প্রয়োজন।
বর্তমানে ভারতের শিলিগুড়ি দিয়ে ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ আছে যা শিলিগুড়ি করিডোর যা “চিকন নেক” বলে পরিচিত। এই শিলিগুড়ি করিডোর চীনের নিকটবর্তী হওয়ায় ভারত তার সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর নিরাপদ রাস্তা হিসেবে বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট ব্যাবহার করতে চাইছে।
এসব কারণে ভারত কে রেল ট্রানজিট দেওয়া বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি করবে। কারণ ভবিষ্যতে চীন ও ভারতের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হলে চীনের সামরিক বাহিনী ভারতের সামরিক সরঞ্জামের যোগান (Supply Chain) বাধাগ্রস্ত করার জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারতীয় রেলের উপর মিসাইল হামলা চালাতে পারে।
যুদ্ধে প্রতিপক্ষের সামরিক সরঞ্জামের যোগানে (Supply Chain) হামলা একটি পুরোনো রীতি। বর্তমানে চীনের কাছে ব্যাপক পরিমাণে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মিসাইল (Intercontinental Missiles) আছে যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে তারা অনায়াসে হামলা চালাতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের কাছে কোন এন্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল (Anti Ballistic Missile) যেমন এস-৪০০, প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেম নেই। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ কোন বিদেশী রাষ্ট্রের মিসাইল হামলা ঠেকাতে পারবে না।
আরও পড়ুন: দ্রুততার সাথে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য: প্রধান বিচারপতি
আইনি নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের রেলপথ ও সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা রয়েছে। এই রুট দিয়ে ভারতের অসংখ্য দ্রুতগামী যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী রেল চলাচল করে থাকে । সুতরাং বানিজ্যিক মালামাল প্রেরণের জন্য বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট ভারতের কোন প্রয়োজন নেই।
মূলত সামরিক সরঞ্জাম প্রেরণের জন্য বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট ভারতের প্রয়োজন। ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের খুব নিকটেই চীন ও ভূটান সীমান্ত অবস্থিত। সেখানে ডোকলাম (Doklam) নামক অঞ্চলে চীন সামরিক ঘাঁটি সহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করতেছে। এই কারনে এই ডোকলাম (Doklam) নিয়ে ২০১৭ সালে ভারতের সাথে চীনের সংঘাত শুরু হয়।
এসব কারণে ভারতের আশংকা ভবিষ্যতে ভারত ও চীন বড় ধরনের যুদ্ধে জড়ালে চীনের সামরিক বাহিনী ভারতের এই শিলিগুড়ি করিডোরে আক্রমণ করতে পারে এবং এই করিডোর বন্ধ করে দিতে পারে । যার ফলে ভারত তার উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সামরিক সরঞ্জাম যথাযথভাবে পাঠাতে পারবে না।
এসব দিক বিবেচনা করে, ভারত সম্পূর্ণ সামরিক কারণে বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট ব্যাবহার করতে চাচ্ছে যাতে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিদ্রোহ দমনে এবং অরুণাচল প্রদেশে চীনের সাথে সংঘাত মোকাবেলায় সহজেই সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো যায়। তাই ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে সংযোগকারী বাংলাদেশের এই রেল ট্রানজিট সমঝোতা চুক্তির উদ্যেশ্য সম্পূর্ণ “সামরিক”।
এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে, ভবিষ্যতে ভারত ও চীন যুদ্ধে জড়ালে চীনের সামরিক বাহিনী ভারতের সামরিক সরঞ্জামের জোগান (Supply Chain) বাধাগ্রস্ত করার জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে হামলা চালাতে পারে । এর ফলে ভবিষ্যতে চীন ও ভারতের যুদ্ধে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব লংঘন হবে এবং অগণিত নাগরিকদের জীবন দিতে হবে।
আইনি নোটিশ পাওয়ার ৭ (সাত) দিনের মধ্যে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ এবং ভবিষ্যতে চীনের সাথে সামরিক সংঘাত সৃষ্টিকারী এই রেল ট্রানজিট সমঝোতা চুক্তি বাতিলের অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্ট রিট মামলা দায়ের করা হবে।