মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ৭০০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস) পাচারের মামলায় ২ জন আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে ৪০ হাজার করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক নিশাত সুলতানা এ রায় প্রদান করেন।
একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী সুভাষ দে এ তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডিত আসামী হলেন- কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াক্ষ্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী এলাকার মৃত ফু অং চাকমা ও রং মাচিং চাকমার পুত্র রাহুল চাকমা (৩১) এবং একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের লাতুরীখোলা এলাকার বাচিং চাকমা ও মৃত কিনাউ চাকমার পুত্র জীবন চাকমা (২৪)।
রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামী রাহুল চাকমা আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং অপর দন্ডিত আসামী জীবন চাকমা পলাতক রয়েছে।
রাষ্ট্র পক্ষে একই আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আহমদ কবির এবং আসামীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজমিন হুদা চৌধুরী সেতু মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর বিকেল ৫ টার দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফ বিশেষ জোনের একটি টিম টেকনাফের হোয়াক্ষ্যং বাজারের দক্ষিণ পাশে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের ফুটপাতের উপর অভিযান চালিয়ে রাহুল চাকমা ও জীবন চাকমাকে আটক করে। পরে আসামীদের হাতে থাকা শপিং ব্যাগ থেকে ৭০০ গ্রাম জগন্য মাদক ক্রিস্টাল মেথ (আইচ) উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফ বিশেষ জোনের সহকারী উপ পরিদর্শক মোঃ আনিছুর রহমান বাদী হয়ে রাহুল চাকমা ও জীবন চাকমাকে আসামী করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ৪৪, তারিখ : ১৮/১০/২০২২ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৯৩৭/২০২২ ইংরেজি (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর : ৭৩২/২০২৩ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
২০২৩ সালের ২৭ মার্চ কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতে মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার কাজ শুরু করা হয়। মামলায় ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য্য করা হয়।
ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক নিশাত সুলতানা ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১০ (গ) ধারায় আসামী রাহুল চাকমা ও জীবন চাকমাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, একইসাথে ৪০ হাজার করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা মূলে আসামী রাহুল চাকমাকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে বেঞ্চ সহকারী সুভাষ দে জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করার মাত্র এক বছর ৩ মাসের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আহমদ কবির বলেন, আদালতে মামলাটির সাক্ষ্য প্রমাণ, তথ্য উপাত্ত উত্থাপন করে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাষ্ট্র পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আদালতের এ রায়ে রাষ্ট্র পক্ষ সন্তুষ্ট। এ রায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ রায়ে মাদক কারবারীদের কাছে একটা ম্যাসেজ যাবে।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতে বিচারাধীন মাদক, খুন ও চাঞ্চল্যকর মামলা গুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার কিছু ইতিবাচক কার্যক্রম আদালতে এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণাকৃত মামলাটি চার্জ (অভিযোগ) গঠন করার মাত্র এক বছর ৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা নিঃসন্দেহে একটি গতিশীল বিচার ব্যবস্থার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বহন করে। যা বিচার বিভাগ সম্পর্কে বিচারপ্রার্থীদের আস্থা নিঃসন্দেহে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে অ্যাডভোকেট আহমদ কবির মন্তব্য করেন।