কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের কাজের সময়সীমা ও কর্মপরিধি বাড়ানো হয়েছে। এ কমিশনকে একদিনের ঘটনা তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হলেও সেটি বেড়ে এখন ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সদস্য বেড়েছে আরও দুজন।
রাষ্ট্রপতির আদেশেক্রমে আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সই করা এ সংক্রান্ত গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সরকার কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬ -এর ৩ ধারার ক্ষমতাবলে, গত ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা-সংস্কার আন্দোলনের নামে সংঘটিত ঘটনায় মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠন করিল।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে কমিশনের সভাপতি করা হয়েছে। আর কমিশনের সদস্য হিসেবে আছেন হাইকোর্টের দুই বিচারক যথাক্রমে বিচারপতি এ এম জাহিদ সারওয়ার এবং বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরী।
কমিশনের কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, গত ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে নিহত ব্যক্তিগণের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন ও তাঁদের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিতকরণ; গত ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিতকরণ; এবং গত ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনায় বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান, সরকারি কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ ও কর্পোরেশন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ।
কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬ অনুসারে এই কমিশন তদন্তকার্য সম্পন্ন করে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে ও কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবে এবং কমিশনের সহায়তার উদ্দেশে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যে কোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে পারবে।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি
প্রকাশিত গেজেটের মাধ্যমে গত ১৮ জুলাই জারিকৃত প্রজ্ঞাপন (এস.আর.ও নম্বর ২৭৪-আইন/২০২৪) রহিত করা হয়েছে এবং রোহিতকরণ সত্ত্বেও উক্ত প্রজ্ঞাপনের অধীন গৃহীত কার্যক্রম এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে বলে গণ্য হবে।
এর আগে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, চার সচিব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের সদস্য সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি যে তদন্ত কমিশনের কথা বলছেন, সেটার টিওআর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপন চলে গেছে। ২১ জুলাই পর্যন্ত যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেটার তদন্ত করবে তারা। যেহেতু এর পরিধি, অনুসন্ধান ও তদন্তের পরিসর বেড়ে গেছে, আমরা চিন্তা করছি, তদন্ত কমিশনের সদস্য বাড়িয়ে তিনজন করার। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়তো শিগগির নিতে পারি।
কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিলে গত ১৬ জুলাই ঢাকায় দুজন, চট্টগ্রামে তিনজন এবং রংপুরে একজনের মৃত্যু হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১৬ জুলাই এবং পরবর্তী সময়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও প্রাণহানির তদন্তে ১৮ জুলাই এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সেই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় ছয় জন নিহত হওয়া এবং সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করবে এই কমিটি। তদন্ত শেষে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারকে প্রতিবেদন দিতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগ কমিটির সচিবিক দায়িত্ব পালন করবে।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান এই কমিশনের একমাত্র সদস্য।
এদিকে, কোটা আন্দোলনে হতাহতের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে এই তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান। এছাড়া আন্দোলন চলাকালে হতাহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিকে বিদেশি কারিগরি সহায়তা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন।