সবাইকে গণজাগরণের অভিনন্দন জানালেন নতুন প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ

শিষ্টের লালন ও অন্যায়ের দমন বিচার বিভাগের শাশ্বত দায়িত্ব : প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘শিষ্টের লালন ও অন্যায়ের দমন হলো বিচার বিভাগের শাশ্বত দায়িত্ব। বিচারক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে যে কেউ অন্যায় বা শিষ্টাচার লঙ্ঘন করলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে কেউ ভালো কাজ করলে তাঁকে পুরস্কৃত করা হবে। কিন্তু কোনো ধরনের বিচ্যুতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।’

আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে (প্রধান বিচারপতির এজলাস) আজ সোমবার (১২ আগস্ট) অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এসব কথা বলেন। সংবর্ধনায় প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এর ফলে সংঘটিত গণ–অভ্যুত্থানের কারণ আপনারা সবাই অবগত। এই মুহূর্তে আমরা এক ধ্বংসস্তূপের ওপরে দাঁড়িয়ে আছি। বিগত বছরগুলোতে বিচারপ্রক্রিয়ায় আমাদের বিচারবোধ, ন্যায়বিচারের মূল্যবোধকে বিনষ্ট ও বিকৃত করা হয়েছে। সততার বদলে শঠতা, অধিকারের বদলে বঞ্চনা, বিচারের বদলে নিপীড়ন, আশ্রয়ের বদলে নির্যাতনকে স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত করা হয়েছে। অথচ এ রকম সমাজ ও রাষ্ট্র আমরা চাইনি। এই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আমাদের নতুন যাত্রা শুরু করতে হবে।’

বক্তব্যের শুরুতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞতা ও গভীর শ্রদ্ধা জানাই গণজাগরণে আত্মদানকারী প্রত্যেক শহীদের স্মৃতির প্রতি। আমি তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। ছাত্র-জনতার এই অভুত্থানের সময় অসংখ্য শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁদের অনেকেই এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমি তাঁদের সবার দ্রুত নিরাময় ও সুস্থতা কামনা করছি।’

আরও পড়ুন: ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে : প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি সারা দেশের সব ছাত্র-জনতা–শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি আরও অভিনন্দন জানাই বাংলাদেশের সব স্তরের জনগণকে, যাঁরা শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আজ থেকে প্রতিটি শ্রেয়, শুভ ও কল্যাণকর কর্মে সবাই বিচার বিভাগকে আপনাদের পাশে পাবেন। আমি সচেতন আছি, আমাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট ছাড়াও জেলা জুডিসিয়ারি হলো বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত ক্ষেত্র। অধস্তন জুডিসিয়ারিতে কর্মরত বিচারক সহকর্মীরা আমরা সবচেয়ে বড় শক্তি। দেশের সাধারণ মানুষ বিচার বিভাগ বলতে মূলত ডিস্ট্রিক্ট জুডিসিয়ারিকে বোঝেন।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জুডিসিয়াল সার্ভিসে কর্মরত সহকর্মীদের বলছি, আমি আপনাদের পাশে আছি। আপনারা কোনো ধরনের অন্যায়, চাপ ও ভয়ভীতির আশঙ্কা করবেন না। নির্ভয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে বিচারিক কাজ পরিচালনা করুন। আমরা সবাই জানি, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে ভগ্নদশা থেকে বিচার বিভাগও মুক্ত নয়। কিন্তু ছাত্র–জনতার বিজয়ের এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক সুবর্ণ সুযোগ আমাদের সামনে এনে দিয়েছে। আমরা যেন এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারি, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’

বেলা পৌনে ১১টার দিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে সাম্প্রতিক ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রধান বিচারপতির আহ্বানে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, আইনজীবীসহ উপস্থিত সবাই নীরবতা পালন করেন। আইনজীবী ও আগতদের উপস্থিতিতে আদালতকক্ষ ছিল পূর্ণ।