এক দশকে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ৮৬৮
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

সিটি-পৌরসভা-জেলা ও উপজেলা পরিষদে প্রশাসক বসাতে পারবে সরকার

অধ্যাদেশ জারি

বিশেষ পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলরদের এবং জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্যদের অপসারণ করে প্রশাসক বসাতে পারবে সরকার। এমন বিধান রেখে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আইনগুলো সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এজন্য শনিবার (১৭ আগস্ট) ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন)(সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’; ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’; ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এবং ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

এর আগে শুক্রবার অধ্যাদেশগুলোর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অধিক্ষেত্রে জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ, প্ৰশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখা ও জরুরি কারণে অধ্যাদেশগুলোর খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করা হয়।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে দেশের বেশিরভাগ সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা এবং জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পলাতক রয়েছেন।

এতে এসব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা। এই প্রেক্ষাপটে আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সিটি করপোরেশন

‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এ দুইটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। তা হলো- ধারা ১৩(ক) ও ধারা ২৫(ক)।
১৩(ক)-তে বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করতে পারবে।

২৫(ক) ধারায় বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনের কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে।

প্রয়োজনে যথাযথ বলে বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা দিতে নিয়োগ করতে পারবে।‌ নিযুক্ত প্রশাসক এবং নিযুক্ত কমিটির সদস্যরা মেয়র ও কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে বলেও অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

পৌরসভা

‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এ দুইটি নতুন ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তা হলো ধারা ৩২(ক) ও ধারা ৪২(ক)।

ধারা-৩২(ক)-তে বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভার মেয়র বা কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে।

ধারা-৪২(ক) ধারায় বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভায় একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে।

সরকার প্রয়োজনে যথাযথ বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা দিতে নিয়োগ করতে পারবে। প্রশাসক ও কমিটি মেয়র ও কাউন্সিলরদের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবে বলেও অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

জেলা পরিষদ

‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এ-ও দুইটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। তা হলো ধারা ১০(খ) ও ধারা ৮২(ক)।
ধারা-১০(খ)-তে বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে জনস্বার্থে অপসারণ করতে পারবে।

বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে বলে ধারা ৮২(ক) তে উল্লেখ করা হয়েছে।

সরকার প্রয়োজনে যথাযথ বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা দিতে নিয়োগ করতে পারবে। প্রশাসক ও কমিটি যথাক্রমে চেয়ারম্যান ও সদস্যের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবে বলেও এ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ

‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এ নতুন করে ধারা ১৩(ঘ) ও ধারা ১৩(ঙ) যুক্ত করা হয়েছে।

১৩(ঘ) ধারা অনুযায়ী, বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান বা অন্য সদস্যকে অপসারণ করতে পারবে সরকার।

১৩(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে নিয়োগ দিতে পারবে প্রশাসক। সরকার প্রয়োজনে যথাযথ বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা দিতে নিয়োগ করতে পারবে। প্রশাসক ও কমিটি যথাক্রমে চেয়ারম্যান ও সদস্যের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবে।