আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া ২ হাজার ৮০০ আইন কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করতে যাচ্ছে আইন মন্ত্রণালয়। এসব কর্মকর্তা দেশের ৬৪ জেলার অধস্তন আদালতে ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার তাদের বাদ দিয়ে নতুন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। এ লক্ষ্যে নিয়োগপ্রত্যাশীদের তালিকা প্রণয়নের পাশাপাশি জীবনবৃত্তান্তসহ অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু করছে আইন মন্ত্রণালয় ও সলিসিটর কার্যালয়।
চলতি সপ্তাহে একযোগে বা পর্যায়ক্রমে বিদ্যমান আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করে নতুন নিয়োগ হওয়ার কথা রয়েছে। জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর রুনা নাহিদ আকতার বলেন, ‘কিছু কিছু তালিকা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন মন্ত্রণালয়ের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী আইন কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আইন উপদেষ্টার কাছে নিয়োগপ্রত্যাশী অনেকে নাম ও তালিকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু এসব বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর আইন কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। সে হিসেবে এবারও পরিবর্তন হবে।’
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তালিকা তৈরি হচ্ছে। শিগগিরই বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া আইন কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে নতুন নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।
আরও পড়ুন: ফেনী ও নোয়াখালীতে সুপ্রিম কোর্টের ত্রাণসহায়তা
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতো বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আদালতের বিচারকাজেও। বিএনপি ও জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের চাপের মুখে বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া আইন কর্মকর্তারা শুনানিতে অংশ নিতে পারছেন না। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তাদের অধিকাংশ এখন আদালতেও আসছেন না।
একইভাবে গ্রেপ্তার হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ অন্য নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পক্ষেও আদালতে আইনজীবী পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানি করতে চাইলেও তাঁকে বা তাদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবী ছাড়াই আদালতে বিচারকাজ চলছে।
কিছু ক্ষেত্রে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে শুনানিতে অংশ নিলেও তারা আসামির বিরুদ্ধেই শুনানি করছেন। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় লিগ্যাল এইডের আইনজীবীদের নিয়োগের জন্য আদালতগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় ও সলিসিটর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলায় জিপি-পিপি, অতিরিক্ত পিপি-অতিরিক্ত জিপিসহ প্রায় ২ হাজার ৮০০ আইন কর্মকর্তা রয়েছেন। আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদকাল সরকারের ‘সন্তুষ্টিকাল’ পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: ‘খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থ অবস্থার জন্য দায়ী দুই আইনজীবী’
এ প্রেক্ষাপটে ৬৪ জেলা আদালতে আইন কর্মকর্তা পদে নিয়োগের জন্য নিয়োগপ্রত্যাশীর তদবির শুরু হয়েছে। সারাদেশ থেকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা প্রায় প্রতিদিনই আইন কর্মকর্তা পদে নিয়োগের জন্য আইন উপদেষ্টার কাছে তালিকা দিচ্ছেন। বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের শীর্ষ নেতারা এরই মধ্যে তালিকা দিয়েছেন। অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও নাম দিয়েছেন।
আইন কর্মকর্তাদের স্থায়ীভাবে নিয়োগের জন্য স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে দাবি উঠেছে। তবে কোনো সরকারই স্থায়ী নিয়োগের জন্য আইন করেনি। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন কর্মকর্তা নিয়োগে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের লক্ষ্যে আইনের খসড়া করলেও পরবর্তী সময়ে সেটা আর বাস্তবায়ন হয়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, বর্তমানে জিপি, পিপি ও বিশেষ পিপিদের মাসিক রিটেইনার ফি বিভাগীয় শহরের ক্ষেত্রে ১৫ হাজার ও জেলা শহরের ক্ষেত্রে ১২ হাজার টাকা। জিপিদের মামলাপ্রতি মাসিক ভ্যালুয়েশন ফি সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা।
এ ছাড়া মামলার শুনানির জন্য পিপি ও বিশেষ পিপিদের দৈনিক ফি পূর্ণ দিবসের জন্য ৬০০ টাকা ও অর্ধদিবসের জন্য ৩০০ টাকা। অতিরিক্ত জিপি ও অতিরিক্ত পিপিদের মাসিক রিটেইনার ফি বিভাগীয় শহরের ক্ষেত্রে ১২ হাজার টাকা ও জেলা শহরের ক্ষেত্রে ৯ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত জিপিদের মামলাপ্রতি মাসিক ভ্যালুয়েশন ফি সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা এবং অতিরিক্ত পিপিদের দৈনিক ফি পূর্ণ দিবসের জন্য ৫০০ টাকা ও অর্ধদিবসের জন্য ৩০০ টাকা। এজিপি, এপিপি ও এলজিপিদের মাসিক রিটেইনার ফি বিভাগীয় শহরের ক্ষেত্রে ৬ হাজার টাকা ও জেলা শহরের ক্ষেত্রে ৪ হাজার টাকা। এজিপি ও এলজিপিদের মামলাপ্রতি মাসিক ভ্যালুয়েশন ফি সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। মামলার শুনানির জন্য এপিপিদের দৈনিক ফি পূর্ণ দিবসের জন্য ২৫০ টাকা; অর্ধদিবসের জন্য ১৫০ টাকা।