সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে পবিত্র আল কোরআন এবং ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.) কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ করার অভিযোগে ব্লগারে আসাদ নুর ওরফে আসাদুজ্জামান নুরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে ব্যারিস্টার আকিব আকবর খান চৌধুরী বাদী হয়ে এ মামলার আবেদন করেন।
শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশ অপেক্ষমাণ রাখেন। পরবর্তীতে মামলার অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. রেজাউল করিম সরকার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ‘আসামী পবিত্র ধর্ম ইসলামবিদ্বেষী, কুরুচিপূর্ণ, বিকৃত রুচিসম্পন্ন ধর্মীয় ভাবাবেগ, মূল্যবোধ ও অনুভূতিতে আঘাত করে এমন সব অসত্য মানহানিকর তথ্য তার ফেসবুক আইডি ও ইউটিউব চ্যানেলে এ প্রচার ও প্রকাশ করে। সে গত ২০ আগস্ট তার ফেসবুক আইডি ও ইউটিউব চ্যানেলে এ প্রকাশ করে যে, যেমন আমার কাছে এরকম অনেক বই আছে, চৌদ্দশ বছর আগের একজন মরুর ডাকাত লিখেছেন এই পুস্তকটি এবং এই পুস্তক আমার কাছে কোনো মূল্যই রাখেনা। এবার আমি আপনাদের ঘোষণা করতে চাই যে, আগামী ২৭ আগস্ট যখন তারা ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর বই পোড়াবে, তখন আমি এরকম কোরআনের অসংখ্য পৃষ্ঠা পুড়িয়ে তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করবো। কারণ এই বই আমি আমার টাকা দিয়ে কিনেছি এবং এই বইয়ের প্রতি আমার কোনো সম্মান নেই, এই বই এর যে লেখক সে কুখ্যাত মরুর ডাকাত, মহাউন্মাদ। তার প্রতি আমার কোনো শ্রদ্ধা নেই। আমি তার বই ছিঁড়বো ও পোড়াবো। দেখি আপনারা বই ছেঁড়া এবং পোড়ানোর উদাহরণ যেটা তৈরি করেছেন, সেটা আপনারা কতদূর বাস্তবায়ন করতে পারেন।’
মামলায় আরও বলা হয়, আসামী তার ফেসবুক আইডি ও ইউটিউব চ্যানেলে এ উপরোক্ত বক্তব্য প্রচার-প্রকাশ করে সমগ্র পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত পবিত্র আসমানী কিতাব কোরআন মাজিদ যাহা অভিযোগকারীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এর পথপ্রদর্শক আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর দীর্ঘ ২৩ বছর যাবত নাজিলকৃত সেই পবিত্র কিতাবকে অপমান অপদস্থ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা সহ আল্লাহর রাসুল নবীকরিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে চরম অপমান অপদস্থ হেয় প্রতিপন্ন করার ঘৃণ্যতম অপরাধ করেছে। যা ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসী সকল ইমানদার ধর্মভীরু মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগ ও অনুভূতিতে চরম আঘাত এনেছে। প্রকাশ থাকে যে অভিযুক্ত আসামী কেবলমাত্র পবিত্র কোরআন মাজিদ ও হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মানহানিকর অপমান অপদস্থ বা ঘৃণ্যতার প্রচার প্রচারণা করেই ক্ষান্ত থাকে নাই, সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষানুরাগী ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর সম্মানিত উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল মহোদয়কে অপমান অপদস্থ করে অসত্য মানহানিকর মিথ্যা প্রচার প্রচারণা করেছে।
যেমন ড. আসিফ নজরুল সাহেবের বিগত ৮ আগস্ট ফেসবুক স্ট্যাটাসে “আমাদের ধর্ম আর প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে যারা জঘন্য কথাবার্তা বলেন তাদের সর্বতোভাবে বর্জন করুন। তাদের কোনো ফেসবুক বা ইউটিউব বক্তব্যে এমনকি নেতিবাচক কোনো সাইনও দিবেন না বা কমেন্টও করবেন না। একমাত্র যেটা করার তা হচ্ছে গণহারে রিপোর্ট করে এই পাপিষ্ঠদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করবেন। আর যখন দেশে ন্যায়বিচার আসবে তখন তার সাহায্য নিবেন। এমন দিন অবশ্যই আসবে বাংলাদেশে।” এ বিষয়েও অসত্য, অপমানজনক, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর বক্তব্য প্রচার করেছে আসামি।
উল্লেখ্য, একই ধরণের অভিযোগে ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্লগার আসাদ নূর আটক হয়ে কারাগারে গিয়েছিল। পরবর্তীতে সে জামিন পায়।