কলেজশিক্ষার্থী মোসারাত জাহান মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে পুনঃতদন্ত চেয়ে করা আপিল আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. আতাবউল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারওয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়ার আপিল শুনানি হবে।’
তিনি আরও বলেন, মুনিয়া তার জীবন নিয়ে শঙ্কিত ছিল এবং নুসরাতকে জানিয়েছিল যে ‘আনভীর তাকে হত্যা করবে’।
২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরদিন মুনিয়ার আত্মহত্যার অভিযোগে প্রধান আসামি হিসেবে আনভীরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন নুসরাত।
তদন্তের প্রথম তিন মাসে এ মামলায় আনভীরকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করেনি পুলিশ।
এরপর ২০২১ সালের ১৯ জুলাই গুলশান থানার প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল হাসান আনভীরকে সব ধরনের অনিয়মের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৮-এ আনভীরসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যামামলা করেন নুসরাত।
আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিলে তারা ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি নুসরাত পিবিআইয়ের মামলা পরিচালনার সমালোচনা করে নতুন করে তদন্তের আবেদন করেন।২০২৪ সালের ২০ মার্চ আনভীরসহ বাকিদের সব অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: কুইক রেন্টালে দায়মুক্তি কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট
এরপর চলতি বছরের ২০ আগস্ট মুনিয়ার পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে মামলার পুনঃতদন্তের নির্বাহী আদেশ এবং প্রধান আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে নুসরাত অভিযোগ করেন, বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের প্রভাব খাটিয়ে মামলা দমনের চেষ্টা করছে।
নুসরাত বলেন, ‘আমি যখন গুলশান থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম, তখন বসুন্ধরার এই ভূমিদস্যুরা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল।’
আনভীরকে বাঁচাতে তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ বেশ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা নির্লজ্জ ভূমিকা পালন করেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মুনিয়ার পরিবারের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারওয়ার বলেন, তিনটি পক্ষই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ- রাষ্ট্র, তদন্তকারী ও আদালত।
সারওয়ার বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের উচিত ছিল মামলাটি তদারকি করা, কিন্তু তারা আপস করেছে। গুরুত্বপূর্ণ মামলা মনিটরিংয়ের দায়িত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সেল থাকলেও তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে এবং আদালতে খালাসের রায় দিয়েছে, তারাও আপস করেছে। সবাই জানে কুখ্যাত সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকই এটা করিয়েছিলেন। তার চেম্বার বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
২৬ পৃষ্ঠার চিঠি লিখেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেন নুসরাত।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা যদি তাদের আশ্রয় না দিতেন, তাহলে আনভীরের মতো মানুষ এতটা বেপরোয়া হওয়ার সাহস পেত না।’
নুসরাত বলেন, ‘আমার বোন হয়তো কিছু ভুল করেছিল, কিন্তু তার প্রতি যে চরম অবিচার করা হয়েছে তা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে তার বিচার করতে হবে।’